আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ বাংলাদেশ থেকে অবশেষে ভারতে ফিরতে চলেছেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন সহ ছয় জন ভারতীয় নাগরিক। বাংলাদেশি সন্দেহে বেআইনিভাবে ‘পুশব্যাক’ করার ছয় মাস পর শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন দুই পরিবারের এই ছয় সদস্য, যাদের মধ্যে তিনজন নাবালক। তাঁদের মধ্যে জেলে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনও। সোমবার বাংলাদেশের আদালত তাঁদের মুক্তি দেওয়ায় আনন্দে ভরে উঠেছে বীরভূমের পাইকর গ্রামের পরিবারগুলি। এখন সবার আগ্রহ কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৪ জুন দিল্লি পুলিশ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে। ২৬ জুন কোনও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাদের বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়। দিল্লিতে কাগজ কুড়িয়ে সংসার চালানো এই পরিবারের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার পাইকর থানার অন্তর্গত এলাকায়। ছয় জনের মধ্যে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন, তাঁর স্বামী দানেশ শেখ ও তাঁদের নাবালক সন্তান সাবির শেখ। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে অসম সীমান্ত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঠেলে দেয়। এরপর ২০ আগস্ট বাংলাদেশ পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

 ঘটনার পর কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্ট পুশব্যাককে বেআইনি ঘোষণা করে জানায়, এই পরিবারের সব সদস্যই ভারতীয় নাগরিক। আদালত কেন্দ্র ও রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, এক মাসের মধ্যে তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তখন থেকেই বিষয়টি সংসদেও তোলেন রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো ভুল এবং এ নিয়ে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি জানান, আমরা এই পরিবারের জন্য নিরন্তর লড়াই চালিয়ে গিয়েছি।

 এদিকে, বাংলাদেশের আদালত সোমবার এই ছয় জনের শর্তসাপেক্ষ জামিন মঞ্জুর করেছে। যদিও ৩ ডিসেম্বর আবার হাজিরার নির্দেশ রয়েছে। তবে আদালত স্পষ্ট করেছে, তাঁরা বাংলাদেশি নন, এবং ভারত সরকারকে তাঁদের ফিরিয়ে নিতে হবে।

 রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম এই অগ্রগতিকে সত্যের জয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গর্ভবতী সোনালিকে বাংলাদেশে পাঠানো ছিল নিছক বাংলাভাষী হওয়ার শাস্তি। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে, সোনালির বাবা ভারতীয় হওয়ায় তিনিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারতীয় নাগরিক। তাই তাঁর সন্তানও ভারতীয়। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তাঁকে দিল্লি নয়, সরাসরি বীরভূমের নিজের বাড়িতে পাঠাতে হবে। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। বীরভূম জেলা প্রশাসন ও সিএমওএইচকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 তিনি আরও জানান, ভারতীয় বাবার সন্তান হিসেবে সোনালির বাংলাদেশি পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে আদালত স্পষ্ট করেছে। এই লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও অভিষেক ব্যানার্জির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেও তিনি জানান।

 জামিন মিললেও আইনি জটিলতার কারণে সোনালিরা বাংলাদেশেই আটকে ছিলেন। তবে রাজ্য সরকার বারবার কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় অবশেষে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র সরকার। সব মিলিয়ে, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর দেশে ফেরার আশা এখন আরও জোরালো হয়েছে। বুধবার সোনালি নিজের জেলা বীরভূমে ফিরতে পারেন কিনা সেদিকেই এখন সকলের নজর।