আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া গয়না হঠাৎ করেই খোয়া যাওয়ায় ভেঙে পড়েছিলেন মুর্শিদাবাদের রানিনগর থানার বংশীবদনপুর গ্রামের বাসিন্দা আরতি গুপ্তা নামের এক প্রৌঢ়া। 
রানিনগর থানার পুলিশ সোনার গয়না চুরির তদন্ত করতে নেমে যা পেল তাতে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে পুলিশের তাবড় কর্তাদের। 

ঠাকুমার বিয়ের সময় পাওয়া গয়না চুরির দায়ে গ্রেপ্তার হলেন নাতি এবং নাত বউ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, গত ২৫ জুলাই বংশীবদনপুর গ্রামের বাসিন্দা আরতি গুপ্তার বাড়ির তালা ভেঙে ঘরের আলমারির লকারে রাখা প্রায় ১৫ ভরি সোনার গয়না চুরি হয়। গত ২৬ তারিখ ওই মহিলা রানিনগর থানায় এই ঘটনার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

এই ঘটনার এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, 'ওই মহিলার বাড়িতে তদন্তে গিয়ে আমরা দেখতে পাই সোনার গয়না চুরি করার পাশাপাশি চোর ওই মহিলার বাড়ির দলিলটি ছিঁড়ে ছোট ছোট টুকরো করে ঘরের মধ্যে ফেলে রেখে দিয়েছে।' ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, 'আরতিদেবীর বাড়িতে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় প্রাথমিকভাবে আমাদের এই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে কিছুটা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে ছেঁড়া দলিল পাওয়ায় আমাদের সন্দেহ হয় ওই মহিলার কোনও নিকট আত্মীয়ই পূর্ব আক্রোশের কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে দলিলটি ছিঁড়ে নষ্ট করে দিয়েছে। এরপর তারা বাড়ির আলমারিতে রাখা প্রায় ১৫ ভরি সোনার গয়না লুট করে নিয়ে পালিয়েছে। সাধারণ চুরির ঘটনা হলে চোরেরা দলিল নষ্ট করত না।' 

আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে বাংলার যুবতীর রহস্যমৃত্যু! বাঁধের জলে স্নান করতে নেমেই তলিয়ে গেলেন, শোকের ছায়া চুঁচুড়ায়

তদন্ত শুরুর পর ওই প্রৌঢ়ার দেওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে তাঁর এক মেয়ের তরফের নাতি রাহুল কর্মকার এবং রাহুলের স্ত্রী মিঠু কর্মকারের উপর। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, 'লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে দৌলতাবাদের বাসিন্দা রাহুল এবং মিঠু কর্মকারকে গ্রেপ্তার করে তাদেরকে আমরা পুলিশ হেফাজতে নিই। পুলিশি  জিজ্ঞাসাবাদে দু'জনে জানায় ঠাকুমার বাড়ি থেকে তারাই সোনার গয়না চুরি করেছে। গতকাল রাতে ধৃত দুই ব্যক্তির বাড়ির একটি স্কুটারের মধ্যে লুকিয়ে রাখা গয়না আমরা উদ্ধার করেছি।' 

রানিনগর থানার এক আধিকারিক বলেন, 'প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি আরতিদেবীর নাতি রাহুল কর্মকার বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে  জড়িত। দৌলতাবাদ থানায় তার নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। নাতির কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে আরতিদেবী নিজের মেয়ে বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না।' 
 
সূত্রের খবর, গত ২৫ তারিখ কিছু কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন আরতিদেবী। সেই সময় কোনও এক ফাঁকে রাহুল তালা ভেঙে ঠাকুমার বাড়িতে ঢোকে  এবং গয়না লুট করে পালিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের আরও অনুমান, ধৃত ব্যক্তি এবং তার স্ত্রীর বাজারে বেশ কিছু টাকার দেনা হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে তারা ঠাকুমার গয়না চুরি করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। 

পুলিশ সূত্রের খবর, আরতিদেবীর যে সোনার গয়নাগুলো গয়না চুরি হয়েছিল তার মধ্যে বেশ কয়েকটি তাঁর বিয়ের সময় পাওয়া। এর পাশাপাশি পরবর্তীকালে তিনি নিজের এক জামাইয়ের সোনার দোকান থেকেও কিছু গয়না তৈরি করিয়েছিলেন। উদ্ধার হওয়া গয়নার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৩ লক্ষ টাকার বেশি। 
একসঙ্গে লক্ষাধিক টাকার গয়না হারিয়ে প্রৌঢ়া আরতিদেবী যথেষ্ট ভেঙে পড়েছিলেন। তবে যে দ্রুততার সঙ্গে পুলিশ তদন্ত শেষ করে তার বিয়ের সময় আশীর্বাদে পাওয়া গয়না ফিরিয়ে দিয়েছে, তাতে পুলিশের তারিফ করতে ভোলেননি তিনি।