আজকাল ওয়েবডেস্ক: হুগলি জেলার রিষড়ার বাসিন্দা সোমনাথ বণিক গত প্রায় ১৬ বছর ধরে ঘরছাড়া। নিজের এক অদ্ভুত স্বভাবের জন্য সোমনাথ তৃণমূল মহলে একটি বহুল পরিচিত মুখ।
গত প্রায় ১৬ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যেখানেই সভা করেন তাঁর বক্তব্য শুনতে সেখানে পৌঁছে যান তিনি। খাওয়া বা ঘুমানোর কী ব্যবস্থা হলো সেসব নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। শুধু ‘প্রাণের’ দিদি’র টানে বছরের পর বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন সোমনাথ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর স্টেডিয়াম থেকে দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে একটি রাজনৈতিক জনসভায় বক্তব্য রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য বুধবারই মুর্শিদাবাদ জেলায় হাজির হয়ে গিয়েছেন সোমনাথ। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঠান্ডার মধ্যে কোনওরকমে রাত কাটিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল হতেই হাজির হয়ে গিয়েছেন স্টেডিয়াম চত্বরে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতি নিজের ভালবাসার গল্প জানাতে গিয়ে সোমনাথ বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকেই আমি দিদির সঙ্গে রয়েছি। যেখানেই দিদির সভা হয় সেখানেই আমি চলে যাই।’
কলকাতার একটি ছোট কোম্পানিতে মাল সরবরাহের কাজ করেন সোমনাথ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য মাঝেমধ্যেই নিজের কর্মস্থল থেকে বিনা বেতনে ছুটি নিতে হয় তাঁকে। তবে এর জন্য তাঁর নিজের কোনও আক্ষেপ নেই।
তিনি বলেন, ‘যেখানেই দিদির সভা হয় আমি নিজের টাকা খরচ করে সেখানে পৌঁছে যাই। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই দিদির ঐতিহাসিক লড়াইয়ের দিনেও আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম।’
মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক সংগ্রামে তাঁর পাশে থাকার সময়েই নিজের বাবা–মাকে হারিয়েছেন সোমনাথ। তিনি বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং আমার দলের সেনাপতি অভিষেক ব্যানার্জিকে ভালবাসি। তবে গত ১৬ বছর বিভিন্ন কারণে নিজের বাড়িতে যেতে পারি না।’ এর পেছনে কী কারণ রয়েছে তা তিনি জানাতে রাজি হননি।
২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের জন্য শপথ নেওয়ার পর তাঁর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। সেই স্মৃতি আজও সোমনাথ বণিকের মনের মণিকোঠায় অমলিন হয়ে রয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কালীপুজো ,ভাইফোঁটা, রাখি বন্ধনের দিন আমি দিদির বাড়িতে পৌঁছে যাই।’ তবে দিদির সঙ্গে যে রোজ তাঁর কথা হয় না সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘বহু বছর আগে দিদির সঙ্গে আমার শেষবারের মতো কথা হয়েছে। দিদি আমাকে না চিনলেও দিদির প্রতি আমার ভালবাসা একটুও কমেনি। সময়ের অভাবে আমি মালদায় দিদির সভায় থাকতে পারিনি।’ বহরমপুরের সভায় দিদির বক্তব্য যাতে সামনের সারিতে বসে শুনতে পান সেই কারণে একদিন আগেই বহরমপুরে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি।
আর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল সমর্থকদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া বা তাঁর নিজের কেনা অভিষেক ব্যানার্জি এবং মমতা ব্যানার্জির প্রচুর ছবি। সোমনাথ বলেন, ‘আমার বাড়িতে দুই প্রিয় নেতা–নেত্রীর প্রচুর ছবি রয়েছে। তবে দিদির প্রত্যেক সভায় সব ছবি তো নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। যতগুলো ছবি সম্ভব হয় আমি ব্যাগে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। দিদির সভার সময় আমি সেই সব মাঝে মধ্যে তুলে ধরি।’ বহরমপুরে নিজের প্রাণের চেয়ে প্রিয় ‘দিদি’র সভা শুরুর আগে সোমনাথ জানিয়ে দিলেন, ‘আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের দল (পড়ুন তৃণমূল কংগ্রেস) ২৫০–র বেশি আসন পেয়ে ফের একবার রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে।’
