আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাছ থেকে বেগুন তুলে রান্না করে খেয়েছেন, এই সন্দেহে এক ব্যক্তিকে লোহার রড এবং বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তাঁর নিজের ভাই এবং ভাইপোর বিরুদ্ধে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানার অন্তর্গত বিদুপুর কলোনি গ্রামে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই ব্যক্তির নাম শাহজামাল মণ্ডল (৫০)। গুরুতর আহত অবস্থায় শাহজামালকে স্থানীয় সাদিখানদিয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই খুনের ঘটনার পর থেকে শাহজামালের ভাই এবং ভাইপো যথাক্রমে আশরাফুল শেখ এবং এনামুল শেখ পলাতক বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
জলঙ্গি থানার এক আধিকারিক জানান, 'প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি গোটা ঘটনাটি ক্ষণিকের বচসা থেকে শুরু হয়। মারামারির ঘটনাটি যখন ঘটে সেই সময় মৃতের এক বোন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দুই ভাইকে ছাড়াতে গেলে তাঁকেও অল্পবিস্তার মারধর করা হয় বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।'
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঝগড়ার সময় হঠাৎ করে আশরাফুল এবং এনামুল শাহজামালকে বাঁশ এবং লোহার রড দিয়ে মারতে থাকেন। গুরুতর আহত হয়ে শাহজামাল লুটিয়ে পড়তেই, তাঁকে গ্রামবাসীরা হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে শাহজামালের মানসিক সমস্যা রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে শাহজামালের স্ত্রীর এই কারণে তাঁকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে নিয়েছেন। শাহজামালের এক ছেলেও বর্তমানে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।
বিদুপুর কলোনি গ্রামে বর্তমানে শাহজামাল একাই বাড়িতে থাকেন। আংশিক মানসিক ভারসাম্যহীন শাহজামাল প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন এবং বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাছ ধরতেন। এরপর দিনের শেষে যে যা দিতেন, তাই খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়তেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানিয়েছেন, যে বেগুন গাছটিকে নিয়ে শাহজামালের সঙ্গে তাঁর ভাই এবং ভাইপোর ঝগড়া, সেই গাছটির মালিক তিনজনের মধ্যে কেউ নন। বেগুন গাছটি শাহজামালের বড় দাদা নাজির শেখের জমিতে হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ওই গাছে কয়েকটি ছোট ছোট বেগুন ধরেছে। নিজের বাড়ির গাছের বেগুন ভেজে খাবেন এই পরিকল্পনা শাহজামাল, এনামুল, আশরাফুল সকলেই করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বেগুন গাছে একটি বেগুন কম দেখতে পেয়ে আশরাফুল এবং এনামুলের মনে সন্দেহ হয়, সেই বেগুনটি বুধবার রাতে শাহজামাল রান্না করে খেয়ে নিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকালে তাঁদের মধ্যে বচসা বেঁধে যায়। সেই সময়েই শাহজামালের উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা আক্কাস আলি মণ্ডল বলেন, 'ওই গাছ থেকে আদৌ বেগুন তোলা হয়েছিল কি না সেই বিষয়ে আমরা কেউই নিশ্চিত নই। আজ সকালে আমি যখন চায়ের দোকানে বসেছিলাম সেই সময় কয়েকজন খবর দেন শাহজামালকে মারধর করা হচ্ছে। এরপর গ্রামবাসীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে মৃত্যু হয় শাহজামালের। পরিবারের দুই সদস্য আশরাফুল এবং এনামুল তাঁকে লোহার রড এবং বাঁশ দিয়ে মারধর করেছে।'
