আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। আজকের জনসভায় তিনি অভিযোগ করেন তাঁর  নিজের দলের কয়েকজনের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে বিজেপি এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করে  তৃণমূলকে দোষ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে তিনি থাকতে যে এটা হবে না তা আজ পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। 

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবারই দলনেত্রী বহরমপুরে জনসভার কিছুক্ষণ আগে  তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য  শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের  বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে দলবিরোধে কাজের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'কেউ মসজিদ করতেই পারেন, তবে সেই ঘটনায় যেন কোনও সাম্প্রদায়িক উস্কানি না থাকে।'
 
প্রসঙ্গত বেলডাঙায় 'বাবরি মসজিদ' নামে একটি নতুন মসজিদ তৈরি করার পরিকল্পনা করে হুমায়ুন কবীর নতুন করে ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে কিছুদিন ধরেই অভিযোগ উঠেছে। 

 

 তাঁর আজকের প্রায় এক ঘন্টার ভাষনে একবারও হুমায়ুন কবীরের নামও আজ উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, 'মুর্শিদাবাদের নতুন করে কোনও দাঙ্গা হোক বা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে এনআইএ-র  হাতে গ্রেপ্তার হতে হোক এটা আমি চাইনা। মুর্শিদাবাদ জেলা শান্তির জেলা এখানে কোনও দাঙ্গার প্রশ্রয় দেবেন না।'
 
আজকের সভায় আগত সকলের উদ্দেশে মমতা বলেন, 'বুক পেতে শান্তি রক্ষা করবেন। তাহলেই সকলে  শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।   নির্বাচনের আগে কেউ কেউ বিজেপির টাকা খেয়ে তাদের তাবেদারি করে। তারা হচ্ছে দেশের শত্রু। তারা এটা বিজেপির পাল্লায় পড়ে করে।'
 
তিনি আরও বলেন, 'বিজেপির কিছু 'গদি মিডিয়া' রয়েছে।  তারা অনেক কিছু ঠিক করে দেয়। এসব জিনিস দেখবেন না।' সঙ্গেই উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলেন, 'একটা  ধান পচে গেলে, সেগুলো সরিয়ে দিতে হয়, নইলে সব ধান পচে যায়। কিছু পোকামাকড় উড়ে আসে, পোকামাকড় আসলে আমরা  সরিয়ে দিই। পোকামাকড় থাকবেই। জীবন চলবে, দেশও চলবে, বাংলাও চলবে।'

মুর্শিদাবাদের সভামঞ্চ থেকেই আজ তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দেন। তিনি বলেন, 'মুর্শিদাবাদের মানুষ  দাঙ্গা পছন্দ করেন না। ২০০৬-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ইস্যুতে দেশ জুড়ে যখন সাম্প্রদায়িক  অশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল তখনও কিন্তু মুর্শিদাবাদে কোনও দাঙ্গা হয়নি।"
   
তিনি বলেন,  'দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে বাংলায়  ৬ ডিসেম্বর দিনটি 'সম্প্রীতি দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সব ধর্মের মানুষকে নিয়েই এই সম্প্রীতি দিবস পালিত হয় ।'  সম্প্রতি, জঙ্গিপুর এবং  ধুলিয়ানের কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করা এবং এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে বিপদে রক্ষা করবে এটাই  রাজ্যবাসীর উদারতা । কারণ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে সব ধর্মের মানুষই রয়েছেন। আর তাঁরা নিজেদের আচার অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করতেও পারেন। তাই যেখানে যে ধর্মের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁরা  সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষদের বিপদে রক্ষা করবেন এটাই নিয়ম।' 
 
বিরোধী রাজনৈতিক দলদের নিশানা করে বলেন, 'সাম্প্রদায়িকতার রক্তে যারা হোলি খেলছেন তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বাংলার মাটিতে জন্মেছিলেন তেমনই কাজী নজরুল ইসলামও এই বাংলার মাটিতেই ছিলেন । বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্ম দিয়েছে এই বাংলার মাটি। তাই বাংলায়  ধর্মীয় অশান্তি ছড়িয়ে দেওয়া এত সহজ হয় হবে না।'

একই সঙ্গে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলাকে গর্বের জেলা এবং শান্তির জেলা বলে অভিহিত করে বলেন, 'নির্বাচনের দু' মাস আগে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করার জন্য বিজেপি কোনও কোনও মানুষকে ফান্ডিং করছে। যাতে সব দোষ গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উপর পড়ে।'