মনিরুল হক, কোচবিহার: কোচবিহারের প্রশাসনিক সভা থেকে সোমবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে পুলিশ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই জেলা ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় নাকা চেকিং বাড়ানোর পাশাপাশি বেআইনি লেনদেন ও সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢুকে যেন কেউ বাসা বাঁধতে না পারে সেই বিষয়ে  তৎপর হওয়ার উপর জোর দেন তিনি। একইসঙ্গে এসআইআর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী।


মমতা বলেন, 'কোচবিহারে সীমান্ত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা যেন কোনওভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সেটাই প্রথম লক্ষ্য। কোনও মাতব্বরি চলবে না। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।' রাজ্যে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের গতি বাড়াতেও প্রশাসনকে নির্দিষ্ট নির্দেশ দেন তিনি।


সম্প্রতি কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে অসম থেকে ডাকযোগে এনআরসি নোটিস পাঠানোর প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমরা কোনও বৈষম্য মানি না। বহু রাজবংশীকে অসমে নোটিস ধরানো হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।' তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে পুশব্যাক হয়ে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক এখনও আটকে আছেন। এবিষয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি? তাহলে উর্দুভাষীরা কি পাকিস্তানি?'
মমতা আরও বলেন, 'রাজ্যের পুলিশ এত ভীতু হলে চলবে না। প্রো-অ্যাক্টিভ হতে হবে। বর্ডার দিয়ে প্রচুর বেআইনি লেনদেন হচ্ছে। যারা বেশি সমালোচনা করে, অনেক সময় তারাই লাভবান হয়, আর দোষ চাপানো হয় নিরীহ মানুষের মাথায়।'


নাম না করে বিএসএফকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'অন্য রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সংস্থা যেন হঠাৎ করে বাংলার কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারে। 'অপরাধী' হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সেটা রাজ্যকে জানিয়ে। সাধারণ মানুষ আর অপরাধী এক নয়। যাকে খুশি ক্রিমিনাল বললেই সে ক্রিমিনাল হয় না।'
ডিটেনশন ক্যাম্প ইস্যুতেও মুখ্যমন্ত্রী দৃঢ় অবস্থান নেন। বলেন, 'নমঃশূদ্রদের বলছি বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প আমি থাকতে করতে দেব না। অসমের কোনও অধিকার নেই বাংলার লোককে চিঠি পাঠানোর।' তিনি জানান, এনআরসি তালিকায় অসমে ১২ লক্ষ হিন্দু এবং ৭ লক্ষ মুসলমানের নাম বাদ পড়েছে। অথচ বাংলায় দাবি করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশি ভোটার’-এর আধিক্য। তাঁর মতে, এই বক্তব্য বাস্তবভিত্তিহীন ও বিভাজনমূলক।
মমতা বলেন, 'ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ একসময় এক ছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের আগে যারা এপারে এসেছে, তাঁরা নাগরিক এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।'
এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। তিনি জানান, '১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেওয়া হবে।' প্রকল্পের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে আরও মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
সামগ্রিকভাবে কোচবিহার প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে সীমান্ত রাজনীতি, এনআরসি বিতর্ক, মানবাধিকার রক্ষা এবং রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা দৃঢ় করার প্রতি তাঁর স্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান।