আজকাল ওয়েবডেস্ক: বীরভূম জেলায় দুই প্রান্তে দুই গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় প্রবল চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। একদিকে সিউড়িতে সদ্যবিবাহিতা চম্পা দাসের রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন উঠছে পারিবারিক নির্যাতনের। অন্যদিকে লাভপুরে ময়ূরাক্ষী নদীর বালিঘাট থেকে এক গৃহবধূর আধখানা দেহ উদ্ধারের ঘটনায়, নৃশংসতায় শিউরে উঠেছে গোটা জেলা। যদিও দুটি ঘটনাই ভিন্ন। এলাকা ও পৃথক সময়ের। তবুও দুই গৃহবধূর মৃত্যুর পেছনেই উঠে আসছে শারীরিক অত্যাচার ও পারিবারিক হিংসার অভিযোগ। 

ভয়াবহতা ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে করে লাভপুরের গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুরের ময়ূরাক্ষী নদীর লাঘোসা বালি ঘাট থেকে উদ্ধার হওয়া অর্ধেক দেহটির পরিচয় মিলেছে। মৃতার নাম ওলিমা বিবি। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। তাঁর বাড়ি সাঁইথিয়া থানার মহিষাদল গ্রামে। প্রায় দশ বছর আগে লাভপুর থানার মীরবাঁধ গ্রামের বাসিন্দা শেখ ডালিমের সঙ্গে বিয়ে হয় ওলিমার। তাঁদের ছয় বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে।

মৃতার বাবার বাড়ির অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়িতে দীর্ঘদিন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন ওলিমা। একাধিকবার মারধরের ঘটনা ঘটেছে এবং দু’বার বালিশ চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টা চালানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। সবকিছু সহ্য করেও সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে গত সাতদিন আগে হঠাৎ করেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ওলিমা বিবি। নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয় লাভপুর থানায়।

এরপর বুধবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ ময়ূরাক্ষী নদীর লাভপুর অংশের লাঘোসা বালিঘাট থেকে উদ্ধার হয় তাঁর অর্ধেক দেহ। মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানাজানি হতে ওই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের দাবি, মৃতার কোমরের নিচের অংশ সম্পূর্ণভাবে নেই এবং কোমরের উপরের অংশ গুরুতরভাবে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ভয়াবহ দৃশ্য সামনে আসতেই এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে খুন করে দেহ টুকরো করে বালির ঘাটে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

খবর পেয়ে মৃতার পরিবারের লোকজন লাভপুর থানায় পৌঁছন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করলেও পরিবারকে নির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি দেহ কোথায় রাখা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও তোলা হয়েছে। যদিও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

এই জেলার অন্য প্রান্তে, সিউড়ি সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে আরেক গৃহবধূর মৃত্যুকে ঘিরে অশান্তির ছবি উঠে আসে। শান্তিনিকেতন থানার বল্লভপুর এলাকার বাসিন্দা ১৯ বছরের চম্পা দাসের মৃত্যু ঘিরে বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়ায়। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্বামী আনন্দ দাসের হাতে লাগাতার শারীরিক অত্যাচারের শিকার ছিলেন চম্পা। শেষবার বাবাকে ফোনে আর্ত চিৎকার করে, মারধরের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। মৃতার মা রূপা দাস সরাসরি জামাই অর্থাৎ মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছেন। এই ঘটনাকে ঘিরে সিউড়ি সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। পরে পুলিশ মৃতার পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেয়।