অতীশ সেন, ডুয়ার্স: মৃত শাবকের দেহ আগলে সকাল থেকে চা বাগানে দাঁড়িয়ে রয়েছে মা হাতি। ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের কারবালা চা বাগানে। সম্ভবত চা বাগানের মাঝে থাকা নিকাশি নালা পেরনোর সময় সেখানে পড়ে গিয়ে হস্তিশাবকটির মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে শনিবার ভোরে রেতির জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে হাতির একটি দল কারবালা চা বাগানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় বাগানের ১৫ নম্বর সেকশনে শাবকটি পড়ে যায়। সেখানেই মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই মৃত শাবকটির দেহ পাহারা দিয়ে ঘটনাস্থলেই দাঁড়িয়ে রয়েছে মা হাতিটি। দেহটি মাটি চাপা দিয়ে সমাধিস্থ করার চেষ্টাও করেছে শাবক হারা মা। ঘটনার খবর পেয়ে বন দপ্তরের বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়ার্ড, বানারহাট রেঞ্জ এবং খুনিয়া ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়ার্ডের আধিকারিক ও কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। বন দপ্তরের একটি গাড়ির উপরেও মা হাতিটি হামলা চালায়। স্থানীয় মানুষ হাতি দেখতে ভিড় জমান। জানা গেছে, মাঝে মাঝেই সেটি বনকর্মী ও দূরে থাকা স্থানীয়দের দিকে তেড়েও যাচ্ছে। সন্তান হারানোর শোকের কারণেই হাতিটি এমন আচরণ করছে বলে বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, কোনও হাতির মৃত্যু হলে তার দেহ সমাধিস্থ করার প্রবণতা হাতিদের মধ্যে দেখা যায়। দলের কোনও সদস্যের মৃত্যু হলে তার দেহ ফেলে চলে না গিয়ে হাতির দল সেটিকে ঘিরে দীর্ঘ সময় শোক পালন করে এবং দেহটি সমাধিস্থ করার চেষ্টা করে। এর আগে এরকম ঘটনা ডুয়ার্সে আরও কয়েকবার দেখা গিয়েছিল। ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ডুয়ার্সের দেবপাড়া চা বাগানের ৩০ নম্বর সেকশনে এবং ১৭ নভেম্বর ২০২২ চুনাভাটি চা বাগানের ৩৯ নম্বর সেকশনে দুটি হস্তি শাবকের মৃত্যু হলে দেহ দুটিকে হাতির দল কবর দিয়েছিল। ২৭ মে ২০২২ চুনাভাটি চা বাগানে একটি সদ্যোজাত হস্তিশাবকের মৃত্যু হলে বাচ্চাটির মা শাবকটির দেহ শুঁড়ে তুলে চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রায় দীর্ঘ দশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রেডব্যাঙ্ক চা বাগান নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে অপেক্ষারত হাতির দল মৃত বাচ্চাটির দেহ কবরস্থ করার চেষ্টা করে। এর পর তারা চার দিন দেহটি আগলে রাখে।
এদিকে, কারবালা চা বাগানের ঘটনাস্থলে বনকর্মী এবং বানারহাট থানার পুলিশ কর্মীরা রয়েছেন। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। হাতিটি নিজে জঙ্গলে ফিরে না গেলে সন্ধের পর সেটিকে তাড়িয়ে জঙ্গলে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। এর পরই দেহটি উদ্ধার করা হবে।
