মিল্টন সেন, হুগলি: পান্ডুয়া পুলিশের জালে সাইবার প্রতারক অটোচালক। ধৃত প্রতারকের নাম মহম্মদ আফসার। উদ্ধার হয়েছে একাধিক মোবাইল, সিম কার্ড এবং নগদ টাকা। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পান্ডুয়ার শেখপুকুর বালি খাদ এলাকার বাসিন্দা বছর ২৬-এর মহম্মদ আফসারকে অনলাইন সাইবার প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পান্ডুয়া থানার পুলিশ। বুধবার রাতে তাকে পান্ডুয়ার সামন্ত গলি এলাকায় একটি আবাসন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।তিনতলা বাড়ির দোতলার ঘরে ঘর ভাড়া নিয়ে চলত এই প্রতারণা। ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৩টি সিম কার্ড, আটটি ব্যবহার করা মোবাইল, চারটি ব্যবহার না করা মোবাইল এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা। 

গতকাল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ওই আবাসনে অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আফসারকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ধৃত ওই ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির অনলাইন মার্কেটিং এর নকল ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলেন। তারপর সেটিকে নিজের ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার শুরু করে। যাতে সাধারণ মানুষ ওই অনলাইন সাইটে কেনাকাটা করতে থাকেন। তার মাধ্যমেই ধৃত ব্যক্তি বিভিন্ন মানুষের ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের সমস্ত তথ্য পেয়ে যান। পরবর্তীতে তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতারিত ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ টাকা তুলে নিতেন। প্রায় দু’মাস ধরে এই কারবার চালাচ্ছিলেন আফসার। 

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে অটো চালাতেন আফসার। পরবর্তীতে অটো চালানো বন্ধ করে রঙের কাজের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। গত তিন মাসে তাঁর জীবনযাপনে আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল। 

আরও পড়ুন: বিশ্বের একমাত্র দেশ যার নিজের কোনও সেনা নেই, নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া হয় কীভাবে?

পুলিশ ধৃতকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে পাঠায়। এই ঘটনার সঙ্গে আর কেউ যুক্ত রয়েছে কি না, কীভাবে চলত এই অনলাইন প্রতারণা চক্র তার উত্তর খুঁজছে পুলিশ। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিঘটিত অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফাঁদে পড়ছেন কখনও বয়স্করা, তো কখনও মহিলারা। বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি হলেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন সাইবার জালিয়াতিতে। গত এক বছরের হিসেব দেখলে বোঝা যায়, এর প্রভাবে কত মানুষ সমস্ত কিছু খোয়াচ্ছেন। দ্য ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো অনুসারে, গত বছরে ১১ লাখেরও বেশি সাইবার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। বারংবার সতর্ক করা হচ্ছে যাতে নাগরিকেরা সাইবার প্রতারণা থেকে মুক্ত হন। মূলত সাইবার জালিয়াতি চার ধরনের হয়। 

কীভাবে বাঁচবেন সাইবার প্রতারণা থেকে? 
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সকলের প্রথমে, আপনার অজান্তে যেন লেনদেন না করতে পারে কেউ সেই ব্যবস্থা নিন। সেটা করতে গেলে আধার বায়োমেট্রিক সকলের প্রথমে লক করতে হবে। UIDAI ওয়েবসাইটের myaadhaar বিভাগে যান এবং সেখান থেকে বায়োমেট্রিক্স লক/আনলকের অপশন বাছুন।  

দুই, অপরিচিত কোনও ব্যক্তির থেকে কোনও পরিষেবা নেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। বিশেষ করে যদি তারা কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করতে বা কোনও সফ্টওয়্যার ইনস্টল করতে বলে। যে কোনও ডিভাইসে অ্যাক্সেস দেওয়ার আগে একজন বিশ্বস্ত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে নিন। 

তিন, QR কোড স্ক্যান করে যখন টাকা পাঠাবেন তখন খেয়াল রাখবেন। 

চার, যদি কেউ দাবি করে ভুল করে অতিরিক্ত অর্থ পাঠিয়েছে তাহলে একজন অভিজ্ঞের সাহায্য নিন। 

পাঁচ, কোনও লিংক বা এসএমএস এলে তার রিপ্লাই দেওয়ার আগে ভালো করে বিষয়টি জেনে নিন।
 
যদি বোঝেন প্রতারিত হচ্ছেন, বা কোনও বিষয় নিয়ে সন্দেহ জাগে, তাহলে অতি অবশ্যই সাইবার ক্রাইম নম্বর ১৯৩০ তে কল করুন। অভিযোগ দায়ের করুন। 

ছবি পার্থ রাহা।