আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ দেশই মনে করে যে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের শক্তি প্রায়শই  সেনাবাহিনী এবং অস্ত্র কতটা আধুনিক এবং শক্তিশালী তার উপর নির্ভর করে। অনেক দেশ আরও ভাল যুদ্ধবিমান এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে অন্যান্য দেশের থেকে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, এখনও এমন একটি দেশ আছে যারা কোনও সেনাবাহিনী না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপনি যদি ভাবছেন যে কোন দেশ এই বিরল পথটি বেছে নিয়েছে, সেই দেশের সন্ধানই দেওয়া রইল এই প্রতিবেদনে।

অনেক দিন আগে, ১৮৬৯ সালে, আইসল্যান্ড একটি সাহসী সিদ্ধান্তে তারা স্থায়ী সেনাবাহিনী না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও বেশিরভাগ দেশ তাদের সামরিক বাহিনী শক্তিশালী করার পদক্ষেপ করেছিল সেই সময়। কিন্তু আইসল্যান্ড হেঁটেছিল অন্য পথে। এর অর্থ এই নয় যে দেশটি সম্পূর্ণরূপে অরক্ষিত।

আইসল্যান্ড এখনও ন্যাটোর সদস্য। ন্যাটো একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী যার সদস্য দেশগুলি একে অপরকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা মিশনে সহায়তা করার জন্য, আইসল্যান্ডের একটি বিশেষ দল রয়েছে যার নাম ক্রাইসিস রেসপন্স ইউনিট। এই দলটি সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী নয়, তবে প্রয়োজনে তারা গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সহায়তা করে।

১৯৫১ সালে আইসল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। যার ফলে আমেরিকা আইসল্যান্ডে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে এবং আইসল্যান্ড প্রতিরক্ষা বাহিনী নামে একটি বাহিনী তৈরি হয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, এই ঘাঁটিটি দেশটিকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছিল। তারপর ২০০৬ সালে ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সে দেশে কোনও সৈন্য না রেখেই আমেরিকা আইসল্যান্ডকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। আইসল্যান্ড ন্যাটো বন্ধু নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং অন্যান্য মিত্র দেশের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। তারা  সামরিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা করে থাকে একে অপরকে।

আরও পড়ুন: আহমেদাবাদ বিপর্যয়ের পরে কি বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করবে এয়ার ইন্ডিয়া?

ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে ব্রাসেলসে বৈঠকের পর আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা উপর কাজ চলছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী বছরগুলিতে আইসল্যান্ড প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করবে। 

যদিও আইসল্যান্ডের নিজস্ব সেনাবাহিনী নেই, তবুও ন্যাটো দেশটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দেখে এবং মহাসচিব জোটকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আইসল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। দেশটি বিমান প্রতিরক্ষা এবং রাডার সিস্টেম পরিচালনা করে। এটি ন্যাটো বিমান এবং মিশনের জন্য স্থান, সহায়তা এবং সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করে। তার উপরে, আইসল্যান্ড নিয়মিতভাবে বৃহৎ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেমন ন্যাটোর শীর্ষ সাবমেরিন-বিরোধী মহড়া "ডাইনামিক মঙ্গুজ"।

আরও চমক রয়েছে আইসল্যান্ডে। এটিই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কোনও ধরণের মশা নেই। আইসল্যান্ডে কোন সাপ বা অন্যান্য সরীসৃপ নেই। এই কারণেই দেশটিকে ‘সাপমুক্ত দেশ’ বলা হয়। সবচেয়ে মজার তথ্য হল আইসল্যান্ডে হ্রদ, পুকুর, জলাভূমি এবং প্রায় ১৩০০ প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে, তবুও মশা বেঁচে থাকে না।