আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বভারতীতে ফের বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের উদ্দেশে পাঠানো সতর্কবার্তা চিঠি নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে ও ছাত্রসমাজের স্বাভাবিক বক্তব্য প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, এটি এক ধরনের ‘থ্রেট কালচার’, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করছে।

ঘটনার সূত্রপাত শান্তিনিকেতনের ভাষা- বিদ্যাভবন সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে। ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাত দিনের মধ্যে পূর্বপল্লী মেলার মাঠ সংলগ্ন বিবেকানন্দ সরণী দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেয়। পরে দুর্গাপুজো সামনে রেখে সময়সীমা বাড়িয়ে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। অবশেষে উৎসব শেষে ২২ অক্টোবর সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার সমস্ত খাবারের দোকান ও অস্থায়ী স্টল সরিয়ে দেয় প্রশাসন।

এর ফলে বিপাকে পড়েন বহু ছাত্রছাত্রী। অভিযোগ, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রতিদিন ওই দোকানগুলো থেকেই সুলভ মূল্যে খাবার খেতেন। হঠাৎ করে সেই দোকানপাট তুলে দেওয়ায় তাঁদের খাবারের সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে পর্যাপ্ত খাবারের যোগান নেই বলেও দাবি করেন ছাত্রছাত্রীরা। অনেকে জানান,  টিফিন ব্রেকের সীমিত সময়ে সব ছাত্রছাত্রীকে খাবার দিতে পারে না ক্যান্টিন। ফলে দিনের পর দিন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ২৯ অক্টোবর শান্তিনিকেতনের সেন্ট্রাল অফিসের সামনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের একাংশ গণতান্ত্রিক উপায়ে স্মারকলিপি জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই কর্মসূচির পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অভিভাবকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, কিছু শিক্ষার্থী অবৈধ দখলদারদের সমর্থনে প্রতিবাদ ও জমায়েত করছে এবং সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছে যে ওই দখলদাররাই নাকি তাদের খাবার জোগান দিত। প্রশাসনের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যান্টিন ও তার শাখাগুলি ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে, যেখানে ভর্তুকি মূল্যে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

চিঠিতে অভিভাবকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেন এবং পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের দিকে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয় আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও যদি কেউ এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে, তবে প্রশাসন বাধ্য হবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে।

এই সতর্কবার্তায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, নিতান্তই দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর দাবি নিয়ে প্রশাসনের কাছে গিয়েছিলেন। সেই দাবিকেও ‘অশিক্ষার্থীসুলভ কর্মকাণ্ড’ বলা হচ্ছে, যা তাঁদের আত্মসম্মানে আঘাত করছে। এক ছাত্রী বলেন, “আমরা শুধুমাত্র খাবারের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি, কোনও সংঘাত বা অবৈধ কার্যকলাপে অংশ নিইনি। অথচ এখন আমাদের পরিবারের কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো হচ্ছে। এটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা।” আরেকজন ছাত্রের বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য, অথচ এখন মনে হচ্ছে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কথা বলার বদলে চিঠি লিখে ভয় দেখাতে চাইছে।”

এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সোমবার এসএফআইও মুখ খোলে। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রত্যুষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবি দমন করতে প্রশাসন অভিভাবকদের চিঠি পাঠিয়ে এক ধরনের থ্রেট কালচার চালু করেছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভয়ের পরিবেশ গ্রহণযোগ্য নয়।”

বিশ্বভারতীর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রী ও কর্তৃপক্ষের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও প্রকট হয়েছে। অভিভাবকদের সতর্কবার্তা ঘিরে এখন প্রশ্ন উঠছে—বিশ্ববিদ্যালয় কি তবে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের ভাষাকেও দমিয়ে দিচ্ছে? এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ থ্রেট কালচারের অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণের জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন, আশা করি পড়ুয়ারা বুঝবেন।