আজকাল ওয়েবডেস্ক: উৎসবের মরশুম শেষ হতেই উচ্ছেদ অভিযান শান্তিনিকেতনে। এই ঘটনা ঘিরে বুধবার, সকাল থেকেই নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়াল বিশ্বভারতী চত্বরে। দুর্গাপুজোর ছুটি কাটিয়ে ফের খুলতেই বড় পদক্ষেপ নিল বিশ্বভারতী প্রশাসন। এদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি আধিকারিক অশোক মাহাতোর নেতৃত্বে নিরাপত্তা রক্ষীরা পূর্বপল্লী মেলার মাঠ সংলগ্ন বিবেকানন্দ সরণীতে থাকা সমস্ত হকার ও খাবারের দোকান সরিয়ে দেন। প্রায় এক মাস ধরে চলা টানাপোড়েনের অবসান ঘটল এই উচ্ছেদ অভিযানের মধ্য দিয়ে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই রাস্তায় থাকা হকার ও খাবারের দোকানদারদের সাত দিনের মধ্যে স্থান খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তখনই বলা হয়, ক্যাম্পাস পরিস্কার ও যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কারণ, ওই এলাকায় অবস্থিত ভাষাভবন, পদ্মভবন, নিপ্পন ভবন ও শান্তিনিকেতন থানা—যেখানে প্রতিদিন হাজারো ছাত্রছাত্রী, শিক্ষাকর্মী ও স্থানীয় মানুষজনের আনাগোনা থাকে।
আরও পড়ুন: মিরিকের রাস্তায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যাত্রী নিয়ে ১৫০ ফুট নীচে গড়িয়ে পড়ল গাড়ি, মৃত
তবে পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পর্যায়ে কিছুটা সময়সীমা বাড়িয়েছিল। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নতুন নোটিশ জারি করে জানানো হয়, ৬ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান। দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিলেন, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের মরশুমে হকারদের অসুবিধা না করে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু, সেই বাড়তি সময় শেষ হওয়ার পরও ব্যবসায়ীরা তাঁদের স্টল সরাননি বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ফলে, বুধবার সকালেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রীতিমতো অভিযান চালিয়ে ওই রাস্তা দখলমুক্ত করেন। বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। ব্যবসায়ীরা অনেকে নিজের হাতে দোকান সরিয়ে নিলেও বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে দোকানদারদের বাগ-বিতণ্ডা চলে। এই ঘটনায় সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়।
বিশ্বভারতীর এই অভিযানে গভীর উদ্বেগে স্থানীয় দোকানদাররা। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রছাত্রী, থানার পুলিশ আধিকারিক ও কর্মচারীরা প্রতিদিন তাঁদের দোকান থেকেই খাবার নিতেন। এখন দোকান উঠে যাওয়ায় তাঁদের জীবিকা কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন, সংসার চালানো নিয়ে তাঁরা বিপাকে। বিশ্বনাথ সাউ নামের এক দোকানদার বলেন, 'গত ৩০ বছর ধরে এখানে চা-বিস্কুটের দোকান ও টিফিনের দোকান চালাচ্ছি। এর আগে অনেক উপাচার্য এসেছেন কিন্তু কখনই আমাদের উঠে যাওয়ার জন্য বলেননি কারণ আমরা এই দোকানপাট ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। হঠাৎ উচ্ছেদে এখন বুঝতে পারছি না কোথায় যাব! বাড়িতে মা ও ছেলে অসুস্থ কীভাবে সংসার চালাব কিছুই বুঝতে পারছি না। কর্তৃপক্ষকে পুনর্বাসনের জন্য বা ক্যান্টিনের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকা পরিস্কার রাখা এবং যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বজায় রাখা। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, গত মাসেই দোকানদারদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল। তবু তাঁরা স্থান খালি না করায় এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তবে ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যদি পুনর্বাসনের দাবিতে আবেদন করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
এই ঘটনার পর শান্তিনিকেতন চত্বরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষায় সিদ্ধান্তটি যথাযথ, আবার কেউ মনে করছেন, জীবিকার পথ বন্ধ হওয়ায় মানবিক দিকটিও সমানভাবে বিবেচনা করা উচিত ছিল। এখন সকলের নজর বিশ্বভারতী প্রশাসনের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে — হকারদের পুনর্বাসনের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় কি না, সেটাই দেখার।
