আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও চা বাগানে চিতাবাঘের উপদ্রবের ঘটনা সামনে এল। এবার চিতা বাঘের হামলায় প্রাণ হারাল এক শিশু। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে। জলপাইগুড়ির বানারহাট ব্লকের কলাবাড়ি চা বাগানের হোলাস লাইন এলাকায়। চিতাবাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় মাত্র আড়াই বছরের শিশু আয়ুব ওরাও-র।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির গেটের সামনে খেলছিল আয়ুব। ঠিক সেই সময় হঠাৎ করেই একটি চিতাবাঘ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যায় বাঘটি। ভয়াবহ এই ঘটনা চোখে পড়ে এক স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তির। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন এলাকার প্রতিবেশীরা।

খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আতঙ্কে ভেঙে পড়ে শিশুর পরিবারের সদস্যরা। দ্রুত শুরু হয় তল্লাশি। স্থানীয় বাসিন্দারা ও চা বাগানের শ্রমিকেরা দল বেঁধে বিভিন্ন অংশে খোঁজাখুজি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর চা বাগানের ১৮ নম্বর সেকশনে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার হয়।

দেখা গিয়েছে, আয়ুবের শরীরে একাধিক ক্ষতের চিহ্ন। ধারণা করা হয়েছে এগুলি চিতাবাঘের আক্রমণের ফলেই। এই মর্মান্তিক ঘটনায় মুহূর্তে ভিড় জমে যায় ঘটনাস্থলে। ঘটনার জেরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পাশাপাশি, ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার খবর পেয়ে বানারহাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। খবর দেওয়া হয় বনদফতরের বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ডলাইফ স্কোয়াডকেও। বনদফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার চা বাগানে চিতাবাঘের প্রবেশ এবং হামলা সত্ত্বেও বনদফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বনদফতরের তরফে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

আরও পড়ুনঃ 'হিজড়ে' পরিচয়ে কুড়ি বছর ধরে ভারতে! চাঞ্চল্যকর তথ্য বাংলাদেশি যুবকের, জানুন ...

এই ঘটনার পর এলাকার মানুষ আরও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তার দিক থেকে এই চা বাগানগুলিতে কী আদৌ কোনও ব্যবস্থা আছে? বনদফতরের ভূমিকা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন।

পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে চিতাবাঘ ধরতে ট্র্যাপ ক্যামেরা ও খাঁচা বসানো হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মাত্র আড়াই বছরের আয়ুবের মৃত্যু যে এলাকায় বড়সড় প্রভাব ফেলেছে, তা বলাই বাহুল্য। স্থানীয়রা চিতাবাঘ ধরার পাশাপাশি এলাকাজুড়ে বন দফতরের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ 'আমাকে আমার সন্তানদের থেকে দূরে রাখা হয়েছে'! রাশিয়ান যুবতীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য পার্টনারের ...

প্রসঙ্গত ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে প্রায়ই চিতা বাঘের হানার কথা শোনা যায়। মাঝে মধ্যেই প্রজননের জন্য চিতাবাঘ জঙ্গল ছেড়ে চা বাগানে চলে আসে। শিশুর জন্ম দিতে চা বাগানের মনোরম পরিবেশই পছন্দ চিতাবাঘের। সেই কারণে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন চা বাগানে প্রায়ই খাঁচা পাতে বনদপ্তর। তাতে একাধিকবার চিতাবাঘ বন্দিও করা হয়েছে। 

বর্ষার সময়ে বন্যপ্রাণদের প্রজননের মোক্ষম সময়। সেই কারণে প্রতিবছর ১৫ জুন থেকে ৩ মাসের জন্য জঙ্গলে পর্যটক ও সাধারণ নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বনদপ্তর। চলতি বছরে ভাটপাড়া চা বাগানে শ্রমিকের ওপর হামলা করে চিতাবাঘ। কোনওভাবে প্রাণে বাঁচেন তিনি। বনদপ্তরের তরফে জঙ্গল লাগোয়া এলাকাগুলিতে নজরদারি করা হয়। এই ঘটনার পর এলাকায় আরও নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।