আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। 'বন্দে মাতরম'-এর ১৫০ বছর উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা। আর সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে তুমুল চর্চা। মোদির সোমবারের মন্তব্যের  জবাব দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, মঙ্গলবার। কোচবিহারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর 'বঙ্কিমদা' মন্তব্যের জবাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কালকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বললেন বঙ্কিমদা।  যেন মনে হচ্ছে হরিদা আর শ্যামদা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি ন্যাশন্যাল সং রচনা করেছেন, তাঁকে এইটুকু সম্মান দিলেন না। আপনাদের তো মাথা নিচু করে নাকখত দেওয়া উচিত জনগনের কাছে। তাতেও ক্ষমা হবে না। আপনারা অসম্মান করেছেন দেশের ইতিহাসকে। দেশের সংস্কৃতিকে, দেশের আন্দোলনকে।'  এদিন ফের মুখ্যমন্ত্রী স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার অবদানের কথা মনে করিয়ে দেন। 

'বঙ্কিমদা' চর্চার শুরু সোমবার। 'বন্দে মাতরম' রচনার ১৫০ বছর পূর্তি। নভেম্বরেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, 'বন্দে মাতরম'-এর ১৫০ বছরে, বছরভর নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হবে তা। সংসদে শীতকালীন অধিবেশনের মাঝে, সোমবার লোকসভায় 'বন্দে মাতরম' নিয়ে বলতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, 'এই গান শক্তির মন্ত্র দিয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে গোটা দেশের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল বন্দে মাতরম। বন্দে মাতরম বহু প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।' 

'বন্দে মাতরম' নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্যের মাঝেই, মোদির এক মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। এদিনের বক্তব্যে, একটা বড় সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলা, বাঙালি নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানেই,  বাঙালি বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে বলার সময়, মোদির কথায় শোনা যায় 'বঙ্কিমদা'। তিনি বলেন, 'বঙ্কিমদা এমন একটা সময় এই গান লিখেছিলেন, যখন ভারতকে নিচু করে দেখানোটাই ফ্যাশন ছিল।' যদিও তাঁর বক্তব্যের মাঝেই ভুল শুধরে দেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়। তিনি মোদির ভাষণ শুধরে দিয়ে বলেন, 'অন্তত বাবু বলুন।' সৌগত রায়ের বক্তব্যের পরেই, প্রধানমন্ত্রী দ্রুত উত্তর দেন, 'আমি বঙ্কিম বাবু বলব। ধন্যবাদ, আমি আপনার অনুভূতিকে সম্মান করি।' এরপর তিনি হালকা স্বরে বলেন, 'আমি আপনাকে দাদা বলতে পারি, তাই না? নাকি এতেও আপনার আপত্তি আছে?' মোদির এই বঙ্কিমদা মন্তব্যেই শুরু হয় তুমুল চর্চা। 

কেবল 'বঙ্কিমদা' নয়, বাঙালিদের কথা বলতে গিয়ে, মোদি আরও এমন কিছু বলেছেন, যেগুলি নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পুলিনবিহারী দাসের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলে বসেন, পুলিনবিকাশ। আবার বঙ্কিম'এ 'দা' বলে বাধা পেয়ে, মাস্টারদা'র থেকে 'দা' বাদ দিয়েও বসেন।  প্রধানমন্ত্রীর পর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত এদিন বলেন, 'বন্দে মাতরম যখন মহান কবি বঙ্কিম দাস চ্যাটার্জি লিখেছিলেন...'। তাঁর এই বক্তব্যের পরেই তুমুল হইচই শুরু হয়ে যায় লোকসভার অন্দরে। হইচইয়ের মাঝেই দায়সারা ভঙ্গিতে তিনি বলেন, 'বঙ্কিম চ্যাটার্জি, চট্টোপাধ্যায়' বলে, তুমুল হইচইয়ের মাঝেই বাকিদের  থামার ইশারা করে, নিজের বক্তব্য বলতে থাকেন। 

সোমবারেই সুর চড়িয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সংসদে তিনি বলেন, কাকলি এদিন বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে, যেভাবে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বঙ্কিমদা বললেন, মনে হল বোধহয়  চায়ের আড্ডায় বসে তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন। বাংলা এটা ভালভাবে নিচ্ছে না। বাঙালি এটা ভালভাবে নিচ্ছে না। যেমন বাঙালি ভালভাবে নিচ্ছে না ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তিকে দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙে দেওয়া। রামমোহনের অপমান বাঙালি মেনে নিচ্ছে না। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে দাদা বলে সম্বোধন করাটা বাঙালি মেনে নিচ্ছে না।' মঙ্গলবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে প্রতিবাদে বসেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি হাতে নীরব  প্রতিবাদ দেখান তাঁরা।