এখনও ঘরের দেওয়ালে সযত্নে সাজানো শ্রীলা মজুমদারের সাদা-কালো ছবিটি। মৃণাল সেন পরিচালিত ‘একদিন প্রতিদিন’-এর। কুণাল সেন অভিনেত্রীর অসুস্থতার কথা জানতেন না। তাই ভাবতেও পারেননি, এভাবে জীবন্ত মানুষটা সত্যিই দেওয়ালে টাঙানো ছবি হয়ে যাবেন! সেকথা জানিয়ে সামাজিক পাতায় শোকপ্রকাশ তাঁর। একই সঙ্গে ক্ষোভপ্রকাশও, ‘শ্রীলা ওঁর উচ্চতায় পৌঁছোতে পারলেন না।’

সাদা দেওয়ালে চৌকো কাঠের ফ্রেম। তাতে হাসছেন শ্রীলা। কুয়ো থেকে জল তুলতে তুলতে। আটপৌরে ভঙ্গিতে ডুরে শাড়ি। কপালে সিকি সাইজের টিপ। ঘাড়ের কাছে হাতখোঁপা। শ্রীলা যেন পাশের বাড়ির মেয়ে। এভাবেই প্রয়াত আন্তর্জাতিক পরিচালকের ছবিতে তিনি ধরা দিতেন। এবং একের পর এক ছবি করতে করতে তিনি সেন বাড়ির আত্মীয়সম। তাই তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মৃণালপুত্র। সেকথা তিনি বিবরণীতে লিখেছেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমাদের দেয়ালে ঝুলছে এই ছবি। এইমাত্র খবর শুনলাম, শ্রীলা আর নেই। তিনি একজন অসাধারণ অভিনেত্রী। এবং আমাদের পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। মেনে নেওয়া কঠিন…।’

মৃণাল সেনের হাত ধরেই অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখা। সাল ১৯৮০। পরশুরাম ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন পরিচালক। অভিনেত্রী খোঁজার দায়িত্ব স্ত্রী গীতা সেনের উপরে। তিনিই হদিশ দিয়েছিলেন শ্রীলার। অভিনেত্রী তখন মাত্র ১৬। একদিন নাটকের মহড়ায় তাঁকে দেখতে যান মৃণাল। দেখেই পছন্দ হয়ে যায়। এরপর ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘খণ্ডহর’, ‘খারিজ’-এর মতো ছবিতে তাঁদের একসঙ্গে কাজ। 



তথাকথিত নায়িকাসুলভ ছিলেন না কোনও দিন। তাই তাঁকে ভিন্ন ধারার ছবি আপন করে নিয়েছিল। যদিও একাধিক বাণিজ্যিক ছবিতেও শ্রীলা নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু অভিনেত্রী কি তাঁর প্রাপ্য সম্মান পেয়েছেন? মৃত্যুর পর অভিনেত্রীকে ঘিরে এমন প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। কুণাল তাঁরও জবাব দিয়েছেন। প্রকাশ্যে, সামাজিক পাতায় উগরে দিয়েছেন তাঁর ক্ষোভ। এক অনুরাগিনীর বক্তব্যের জবাবে তাঁর শাণিত প্রতিবাদ, ‘শ্রীলা অনেকের চেয়ে ভাল ছিলেন। কিন্তু গাঢ় ত্বকের প্রতি আমাদের সম্মিলিত কুসংস্কার তাঁকে সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে দেয়নি। যেখানে তাঁর পৌঁছানো উচিত ছিল।’