আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫-এ হামাস সাতজন ইজরায়েলি পণবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং তাদের আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের হেফাজতে হস্তান্তর করেছে। এটি হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে পণবন্দি মুক্তির ঘটনা। মুক্তিপ্রাপ্তদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
হামাস জানিয়েছে, এই চুক্তির আওতায় মোট ২০ জন জীবিত পণবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং এর বিনিময়ে ইজরায়েল প্রায় ১,৯০০-রও বেশি প্যালেস্তিনীয় বন্দিকে মুক্ত করবে। এই ঘোষণার পর থেকেই ইজরায়েল জুড়ে অপেক্ষার আবহ তৈরি হয়েছিল, এবং সোমবার সন্ধ্যায় যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে খবর প্রচারিত হয় যে পণবন্দিরা রেড ক্রসের হাতে পৌঁছেছেন, তখন পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ঢেউ বয়ে যায়।
তেল আভিভসহ ইজরায়েলের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বড় স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার দেখছিলেন। বিশেষত ‘হোস্টেজেস স্কোয়ার’-এ (Hostages Square) ভিড় জমেছিল উপচে পড়া। মুক্তিপ্রাপ্ত পণবন্দিদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। কেউ কেউ ইজরায়েলের পতাকা ও তাতে বাঁধা হলুদ ফিতা উঁচিয়ে ধরেন, যা পণবন্দিদের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক। অনেকেই হাতে প্ল্যাকার্ডে প্রিয়জনদের মুখ নিয়ে কেঁদে ফেলেন, কেউ বুক চাপড়ে চিৎকার করে বলেন, “বাড়ি ফিরিয়ে আনো এখনই।”
আরও পড়ুন: হামাসের হাতে প্রেমিকার মৃত্যু, শোকে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে আত্মহত্যা প্রেমিকের!
এই নাটকীয় মুক্তির ঘটনাকে ঘিরে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫-এ ইজরায়েল ও মিশর সফরে রওনা হন এবং যাত্রার সময়ই ঘোষণা দেন যে “গাজার যুদ্ধ শেষ হয়েছে।” যদিও যুদ্ধবিরতির পরবর্তী রাজনৈতিক চিত্র কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবু ট্রাম্পের এই সফর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক শান্তি-প্রচেষ্টার সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি আইজাক হারজগ জানিয়েছেন, গাজা থেকে জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইজরায়েলের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা প্রদান করা হবে। এই ঘোষণা ইজরায়েলি সমাজে স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প তাঁর সফরে ইজরায়েলের সংসদ ‘কনেসেট’-এ ভাষণ দেবেন এবং পরবর্তীতে মিশরে অনুষ্ঠিতব্য এক শান্তি সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করবেন, যেখানে ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি কেবল দুই পক্ষের নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টার এক বড় মাইলফলক হতে পারে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, গাজার মানবিক সংকট, পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে যদি দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, তাহলে এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
এদিকে, ইজরায়েলের রাস্তায় উল্লাসের মধ্যেও অনেকেই এখনো উদ্বিগ্ন—বাকি পণবন্দিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন কবে হবে, এবং এই যুদ্ধবিরতি কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়েই দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। তবু বহু মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর, এই দিনটি মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মনে এক টুকরো আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে।
