আজকাল ওয়েবডেস্ক:  জ্বালানি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম। সংস্থাটি জানিয়েছে, ব্রাজিলের সান্তোস বেসিনে প্রায় ২০ হাজার ফুট গভীরে তারা খুঁজে পেয়েছে তেল-গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার। ‘বুমেরাংগু’ প্রকল্প নামে পরিচিত এই সম্ভাব্য রিজার্ভ যদি বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে এটি দক্ষিণ আটলান্টিকে বিপির জন্য নতুন উৎপাদনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।


বিশ্বব্যাপী তেল-গ্যাস খাতে এখন তুলনামূলক দ্রুত ফল পাওয়া প্রকল্পগুলির দিকে ঝোঁক দেখা গেলেও, বুমেরাংগু আবিষ্কার প্রমাণ করছে যে এখনও মাত্র কয়েকটি কোম্পানি আল্ট্রা-ডিপওয়াটার অনুসন্ধান চালাতে সক্ষম। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের জিওকেমিস্ট জিওফ্রে এস. এলিসের গবেষণায় দেখা গেছে, সান্তোস বেসিনে গ্যাসের প্রকৃতি ও উপাদান ভূগর্ভস্থ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। 


এই রিজার্ভ পাথরের ক্ষুদ্র ছিদ্রে তেল, গ্যাস ও জল আটকে থাকে। তাই শিলা গুণমান, চাপ ও তাপমাত্রা পর্যাপ্ত না হলে উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নাও হতে পারে। বিপি জানিয়েছে, তারা শিলা ও তরলের তথ্য বিশ্লেষণ করবে এবং তারপরেই ভলিউমের কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমান প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন: ফের একবার পাকিস্তানকে কড়া বার্তা, লজ্জায় মাথা হেট হল প্রতিবেশী দেশের


সান্তোস বেসিন ইতিমধ্যেই তুপি, বুজিওস ও সাপিনহোয়ার মতো বিশাল তেলক্ষেত্রের আবাসস্থল। এখানকার কার্বনেট শিলা মূলত প্রাচীন হ্রদে রাসায়নিক অবক্ষেপণ ও জীবজ উপাদান জমে গঠিত হয়েছে। একেক জায়গায় শিলার বৈচিত্র্য এত বেশি যে প্রবাহক্ষমতা অল্প দূরত্বেই নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে।


এছাড়া এক মাইলেরও বেশি পুরু লবণের স্তর ভূগর্ভে তরল আটকে রাখে। লবণের ভেতর দিয়ে ভূকম্পনচিত্র তৈরি করা কঠিন, ফলে লক্ষ্য নির্ধারণে সামান্য ভুলও কয়েকশ ফুট পর্যন্ত স্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে।


প্রাথমিক পরীক্ষায় গ্যাসে উচ্চমাত্রার কার্বন ডাই-অক্সাইড ধরা পড়েছে। সান্তোস বেসিনের অনেক স্থানে এটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে বেশি CO2 মানে প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াকরণ, অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং অনেক সময় তা পুনঃনিঃসরণ বা ভূগর্ভস্থ সংরক্ষণ করার প্রয়োজন। ভূতাত্ত্বিক ত্রুটিপথ ধরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে CO2 জমেছে বলেই বিভিন্ন রিজার্ভে এর ঘনত্ব ভিন্ন।


প্রায় ২০ হাজার ফুট গভীর সাগরে কাজ চালাতে বিশেষায়িত রিগ, লম্বা রাইজার এবং শক্তিশালী সাবসি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। অতিরিক্ত চাপ ও তাপমাত্রা সহ্য করতে এগুলোকে দশক ধরে টেকসই থাকতে হবে। পাশাপাশি হেলিকপ্টার ফ্লাইট, সরবরাহ জাহাজ ও আবহাওয়া সবই প্রভাব ফেলে উৎপাদনের নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতায়।
নতুন কূপকে সাবসি টাইব্যাক পদ্ধতিতে যুক্ত করলে সময় ও খরচ বাঁচে। তবে খরচ নির্ভর করে কূপসংখ্যা, পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ও গ্যাস-জল প্রক্রিয়াকরণের পরিমাণের ওপর।


সান্তোস বেসিনে আবিষ্কৃত প্রি-সল্ট রিজার্ভ এখন বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহের অন্যতম স্তম্ভ। নীতিগত পরিবর্তনে এখন একাধিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি অংশীদার হতে পারছে। প্রযুক্তি উন্নতির ফলে গত দশকে উৎপাদন খরচও অনেকটা কমেছে। এই কারণেই বিপি এবং অন্যান্য অপারেটররা প্ল্যাটফর্মে CO2 ব্যবস্থা ও জ্বালানি দক্ষতাকে পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখছে। সব মিলিয়ে, ‘বুমেরাংগু’ প্রকল্প শুধু বিপির জন্য নয়, বরং বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।