হিমাচলের বিধ্বস্ত উপত্যকায় যখন ঘরছাড়া মানুষের আর্তনাদ, তখন বৃহস্পতিবার স্থানীয় গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ ভাগ করে নিলেন বলিউডের অভিনেত্রী–রাজনীতিবিদ কঙ্গনা রানাউত। বিজেপি সাংসদ ও মাণ্ডি কেন্দ্রের জনপ্রতিনিধি কঙ্গনা এদিন সোলাং ও পালচন এলাকায় বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের দুর্দশার কাহিনি শুনতে শুনতে হঠাৎ করেই নিজের আর্থিক বিপর্যয়ের কথা বলতে শুরু করেন তিনি!

কঙ্গনা বললেন, “গতকাল আমার রেস্তরাঁয় সারা দিনে মাত্র ৫০ টাকার বিক্রি হয়েছে। অথচ আমি মাসে ১৫ লাখ টাকা শুধু কর্মচারীদের বেতন দিই। আপনারা যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, আমিও তেমনই যন্ত্রণায় আছি। আমি-ও হিমাচলির মেয়ে, এই জায়গারই বাসিন্দা।”

কঙ্গনার এহেন বক্তব্যে বিপুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নেটপাড়ায় কঙ্গনার উদ্দেশে ভেসে আসছে নিষ্ঠুর, অনুভূতিহীন, বোকা-র মতো বাছাই করা সব বিশেষণ।  ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা প্রশ্ন তুলেছেন—তাদের মাথার গোঁজার ঘর নেই, খাবার নেই, জীবিকার রাস্তা নেই, এমতাবস্থায় সাংসদের কি নিজের রেস্তরাঁর ক্ষতি নিয়ে কথা বলা উচিত? অবশ্য কঙ্গনার সমর্থকেদের বক্তব্য , কঙ্গনা স্থানীয় মাটির মেয়ে হয়ে নিজের যন্ত্রণা খোলাখুলি বলেছেন, যাতে বোঝা যায় এই বিপর্যয় কেবল সাধারণ মানুষের নয়—অভিজাত পর্যটন ব্যবসাও একেবারে রক্তাক্ত।


এ বছরের শুরুতে কঙ্গনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করেছিলেন মানালির ‘দ্য মাউন্টেন স্টোরি’। মূলত হিমাচলি রান্না–দাওয়াত দিয়ে সাজানো রেস্তরাঁয় পর্যটক আকর্ষণই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু অতিবৃষ্টি, হঠাৎ ভূমিধস, নদীভাঙন আর ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে স্বপ্ন। পর্যটকশূন্য মানালি, সোলাং–কুলু উপত্যকায় এখন ব্যবসা কার্যত স্তব্ধ।

কঙ্গনার সফরে তাঁকে সঙ্গ দেন বিজেপি নেতা ও মানালির প্রাক্তন বিধায়ক গোবিন্দ সিং ঠাকুর। স্থানীয়রা তাঁকে জানালেন—প্রায় ১৫-১৬টি বাড়ি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে পরিবারগুলিকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। গোটা সোলাং গ্রাম নাকি ভেঙে পড়তে বসেছে, কারণ বিয়াস নদী ক্রমশ পাহাড় কেটে গিলে নিচ্ছে গ্রামটিকে। বাসিন্দারা তাই কঙ্গনাকে স্পষ্ট জানালেন—বিয়াসের গতিপথ বদলানো এখন জীবন–মরণ প্রশ্ন।

হিমাচল আবহাওয়া দফতর এদিনই জারি করেছে ইয়েলো অ্যালার্ট—বিলাসপুর, কাংরা, মাণ্ডি ও সিরমৌরে প্রবল বৃষ্টি, বজ্রঝড় ও বিদ্যুতের ঝলকানির পূর্বাভাস। ইতিমধ্যেই শিমলা, কাংরা, পালমপুর, সুন্দরনগর-সহ বিভিন্ন জায়গায় অঝোর বর্ষণ, দমকা হাওয়া বইছে ঘণ্টায় ৩৫ কিমি বেগে। ফল ভয়াবহ। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যের ৫৬৬টি রাস্তা বন্ধ, যার মধ্যে ২টি জাতীয় সড়ক—এনএইচ-৩ (অট্টারি–লেহ) ও এনএইচ-৫০৩এ (অমৃতসর–ভোটা) পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। শুধু মাণ্ডি জেলায় ২০৩টি, কুলুতে ১৫৬টি, শিমলায় ৫০টি সড়ক বন্ধ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

হিমাচল প্রদেশ স্টেট এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে—২০ জুন থেকে শুরু হওয়া বর্ষায় এখনও পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৪১৯ জনের। এর মধ্যে সরাসরি বৃষ্টি–সম্পর্কিত মৃত্যুই ২৩৭—ভূমিধসে ৫২, খাড়া পাহাড় থেকে পড়ে ৪৫, ডুবে ৪০, মেঘভাঙায় ১৭, আকস্মিক বন্যায় ১১। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৮২ জনের।

তাহলে পাহাড়ের ভবিষ্যৎ এখন কোন পথে? সামনে শীতকাল আসছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে পারে। প্রশ্ন উঠছে—বিয়াসকে বাঁচাতে আর সোলাং-মানালি উপত্যকার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকার কবে জরুরি পদক্ষেপ নেবে? আর কঙ্গনার মতো জনপ্রতিনিধিরা কি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বাস্তবিক সমাধান আনবেন, নাকি কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির বেদনায় ডুবে থাকবেন?