আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতিসংঘের একটি তদন্তে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইজরায়েল গাজায় প্যালেস্তিনীয়দের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। যদিও এই অভিযোগের আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গণহত্যা - জাতিগত, ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে গোষ্ঠীগুলিকে নির্মূল করার জন্য রাষ্ট্র-সমর্থিত পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা- রাজনৈতিক সহিংসতার সবচেয়ে চরম রূপগুলির মধ্যে একটি। নিম্নলিখিত ১০টি গণহত্যা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত বা আদালত, জাতিসংঘের প্রতিবেদন বা সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে।
হলোকাস্ট (জার্মানি এবং ইউরোপ, ১৯৪১-১৯৪৫): হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি জার্মানি গ্যাস চেম্বারের ব্যবহার করে রোমা সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, পোলিশ এবং অন্যান্যদের সঙ্গে প্রায় ছয় কোটি ইহুদিদের নির্মূল করেছিল। নুরেমবার্গ ট্রায়াল প্রথম আইনত গণহত্যা সংজ্ঞায়িত এবং বিচার করেছিল।
রোয়ান্ডার গণহত্যা (রুয়ান্ডা, ১৯৯৪): সরকার ও জঙ্গিদের সহায়তায় হুতু চরমপন্থীদের দ্বারা ১০০ দিনে প্রায় আট লক্ষ তুতসি এবং মধ্যপন্থী হুতু নিহত। জাতিসংঘ এবং পশ্চিমি শক্তিগুলি হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আইসিটিআর অথবা রুয়ান্ডার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই গণহত্যার বিচার করে।
কম্বোডিয়ান গণহত্যা (কম্বোডিয়া, ১৯৭৫-১৯৭৯): পোল পটের নেতৃত্বে খেমার রুজ শাসনকালে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়। বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে লক্ষ্য করে একটি মাওবাদী ইউটোপিয়া তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পরে এর নেতাদের বিচার করে।

বসনিয়ান গণহত্যা (বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ১৯৯২-১৯৯৫): বসনিয় সার্ব বাহিনী বসনিয়ান মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছিল। স্রেব্রেনিকায় আনুমানিক আট হাজার পুরুষ ও ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আইসিটিওয়াই, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, রাদোভান কারাদজিচ এবং রাতকো ম্লাদিচের মতো নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
আরও পড়ুন: বিবাহবার্ষিকীর উপহারের জন্য মুখিয়ে ছিলেন যুবতী, শেষমেশ স্বামী যা দিলেন, দেখেই ঘরছাড়া স্ত্রী
আর্মেনীয় গণহত্যা (অটোমান সাম্রাজ্য, ১৯১৫-১৯২৩): আনুমানিক ১৫ লক্ষ আর্মেনীয়কে মৃত্যুদণ্ড, অনাহার এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরের মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্য কর্তৃক হত্যা বা নির্বাসিত করা হয়েছিল। অনেক দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও তুরস্ক তা অস্বীকার করে। যার ফলে উত্তেজনা আজও অব্যাহত রয়েছে।
আইসিস কর্তৃক ইয়াজিদিদের গণহত্যা (ইরাক, ২০১৪): ইসলামিক স্টেট বা আইসিস, হাজার হাজার ইয়াজিদি পুরুষকে হত্যা করেছিল এবং নারী ও শিশুদের দাসে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের একটি তদন্তে গণহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। অনেক অপরাধী এখনও শাস্তির আওতায় নেই।
গুয়াতেমালার গণহত্যা (গুয়াতেমালা, ১৯৮১-১৯৮৩): গুয়াতেমালার সামরিক শাসন মায়া ইক্সিল জনগোষ্ঠীকে নিশানা করে গৃহযুদ্ধের সময় কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করে। নেতা রিওস মন্টকে ২০১৩ সালে গণহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যদিও পরে রায় বাতিল করা হয়েছিল।
হেরেরো এবং নামা গণহত্যা (জার্মান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, ১৯০৪-১৯০৮): আধুনিক বিশ্বের প্রথম স্বীকৃত গণহত্যায়। জার্মান ঔপনিবেশিক বাহিনী বিদ্রোহের পর হাজার হাজার হেরেরো এবং নামা উপজাতিদের হত্যা করেছিল। বেঁচে যাওয়াদের মরুভূমিতে বা শ্রম শিবিরে জোর করে পাঠানো হয়েছিল। জার্মানি গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০২১ সালে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে।
আনফাল অভিযান (ইরাক, ১৯৮৬-১৯৮৯): ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের শাসনকালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে ১,৮০,০০০ কুর্দিকে হত্যা করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০১০ সালে ইরাকি হাই ট্রাইব্যুনাল এটিকে গণহত্যা ঘোষণা করে। আলি হাসান আল-মাজিদকে তাঁর ভূমিকার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
পূর্ব তিমুরের নৃশংসতা (ইন্দোনেশিয়া/পূর্ব তিমুর, ১৯৭৫-১৯৯৯): পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার আক্রমণের ফলে হিংসা, অনাহার এবং রোগব্যাধির কারণে আনুমানিক ১০০,০০০-২৫০,০০০ মানুষ মারা যান। ইন্দোনেশিয়া গণহত্যা অস্বীকার করলেও, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি মানবতার বিরুদ্ধে বৃহৎ আকারের অপরাধ স্বীকার করে। পূর্ব তিমুর ২০০২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।
