আজকাল ওয়েবডেস্ক: আফ্রিকার উষ্ণমণ্ডল থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত, উইভার পিঁপড়েরা জীবন্ত পাতাকে ভাঁজ করে অসাধারণ বহুতল ঘর তৈরি করে। কিন্তু নিজেদের তুলনায় অনেক বড় পাতাকে কীভাবে এরা সঠিক আকারে টেনে নিয়ে আসে, তা বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের বিষয় ছিল। এবার ম্যাকোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক চমকপ্রদ রহস্য উন্মোচন করেছেন। একসঙ্গে কাজ করার সময় প্রতিটি পিঁপড়ে একা থাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি জোর প্রয়োগ করে।


একটি একক পিঁপড়ে তার শরীরের ওজনের প্রায় ৬০ গুণ টানতে পারে, কিন্তু দলগত প্রচেষ্টায় প্রতিটি পিঁপড়ের শক্তি বেড়ে দাঁড়ায় অবিশ্বাস্যভাবে ১০৩ গুণে। এর পেছনে কাজ করে তাদের আঠালো পা এবং সূক্ষ্মভাবে সমন্বিত পা নড়াচড়া, যা তাদেরকে পাতার গায়ে দাঁড়িয়ে এক ধরনের ratchet-এর মতো টানার শৃঙ্খল গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: মিউচুয়াল ফান্ডে একবার বিনিয়োগ করেই হতে পারেন কোটিপতি, জেনে নিন এই ছক


এই গবেষণার জন্য জীববিজ্ঞানী ক্রিস রেইড এবং তাঁর সহকর্মীরা অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে ছয়টি কলোনি সংগ্রহ করেন। ল্যাবরেটরিতে তাঁরা পাতা-আকৃতির কাগজ ব্যবহার করেন, যেগুলো ফোর্স সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পিঁপড়েরা যখন এই কৃত্রিম পাতাগুলো বাঁকাচ্ছিল, তখন তাদের টানার শক্তি মাপা হয়। দলটি লক্ষ্য করে যে পিঁপড়েরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং শৃঙ্খলের অবস্থান অনুযায়ী প্রতিটি পিঁপড়ে আলাদা ভঙ্গি গ্রহণ করে। সামনের পিঁপড়েরা পা বাঁকিয়ে টানে, আর পেছনেররা পা সোজা করে মজবুতভাবে নোঙরের মতো ধরে থাকে, ফলে সম্মিলিত শক্তি অনেকগুণ বাড়ে।


তাদের পায়ের আঠালো প্যাড এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্যাড থেকে তরল নিঃসৃত হয়, যা পাতার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে সাহায্য করে এবং পিছলে যাওয়া রোধ করে। সহ-লেখক, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ডেভিড লাবঁটে এই বৈশিষ্ট্যটিকে বিশেষভাবে তুলে ধরেন। এই বায়োমেকানিক্যাল কৌশল অসাধারণভাবে ভার ভাগাভাগি ও সমন্বয়ের সুযোগ করে দেয়।

?ref_src=twsrc%5Etfw">August 20, 2025


মানুষের সঙ্গে এর বড় পার্থক্য দেখা যায়। বড় দলে কাজ করলে মানুষ প্রায়ই কম পরিশ্রম করে, যা “রিঙ্গেলম্যান ইফেক্ট” নামে পরিচিত। কিন্তু উইভার পিঁপড়েরা উল্টো—দলগত কাজের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। পরবর্তী পর্যায়ে গবেষকরা খুঁজে বের করতে চান, কীভাবে পিঁপড়েরা পা নাড়াচাড়া সমন্বয় করে টান বজায় রাখে, অথচ পিছলে যায় না। এমন অন্তর্দৃষ্টি ভবিষ্যতে রোবটদের ঝাঁককে আরও দক্ষতার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার কৌশল শিখিয়ে দিতে পারে। উইভার পিঁপড়েরা আমাদের শেখাতে পারে কীভাবে সুপার-দক্ষ রোবট দল তৈরি করা যায়। গাছের মগডালের এই ছোট্ট স্থপতিরা হয়তো সহযোগিতামূলক রোবোটিক্সের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র লুকিয়ে রেখেছে।


আসলে প্রথম থেকেই পিঁপড়েরা দলগতভাবে কাজ করতে অভ্যস্ত। তাই তারা নিজেদের জীবনকে সেভাবেই এগিয়ে নিয়ে চলে। এখানে প্রতিটি পিঁপড়ে নিজের কাজ অনুসারে এগিয়ে যায়। সেখানে তারা অন্য কারও ওপর নির্ভর করে না। তাদেরকে বলে দিতে হয়না যে তাদের পরবর্তী কাজটি কী। তাই অতি সহজেই তারা নিজেদের কাজ করতে পারে। দলগতভাবে যে কাজ এরা করে তা দেখে অনেকেই অবাক হয়ে এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।