বর্ষা এলেই অনেক আর্থ্রাইটিস রোগীর পুরনো ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষ করে সারা বছর যাঁরা পেশির ব্যথায় ভোগেন, বৃষ্টির মরশুমে যন্ত্রণা যেন আরও বেড়ে যায়। এই সময়ে আবহাওয়ার আর্দ্রতা, তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন এবং কম শারীরিক নড়াচড়া- সব মিলিয়ে জয়েন্টে ব্যথা ও কঠিনভাব বেড়ে যায়। বেশ কয়েক বছর আগেও বয়স হলেই এই সমস্যা দেখা যেত। কিন্তু এখন কম বয়সিদের মধ্যেও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা প্রকট। বয়স ২০ বা ৩০-এর ঘরে থাকাকালীনও এই রোগের কোপ পড়লে ব্যথায় কাবু হতে হয়। আর্থরাইটিসের সমস্যা থাকলে বর্ষায় সাবধানে থাকা জরুরি। কোন নিয়মগুলি মেনে চললে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, জেনে নিন-
• গরম সেঁক আর গরম জলে স্নানঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, জয়েন্টের ব্যথা ও শক্তভাব কমাতে হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম কম্প্রেস খুব কার্যকর। অনেক ক্ষেত্রে ইপসম সল্ট মিশিয়ে গরম জলে স্নান করলে মাংসপেশি শিথিল হয়, প্রদাহ কমে এবং চলাফেরায় স্বস্তি আসে।
• উষ্ণ এবং শুষ্ক থাকুনঃ আর্দ্রতা শরীরে প্রবেশ করে পেশির শক্তভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বর্ষাকালে গরম পোশাক পরুন, বিশেষ করে হাঁটু এবং পিঠের চারপাশে উষ্ণ রাখুন। ভেজা পোশাক বা জুতার পরে দীর্ঘক্ষণ থাকা এড়িয়ে চলুন।
আরও পড়ুনঃ যতই উপকারী হোক, ডাবের জলে লুকিয়ে 'মারাত্মক বিপদ'! কারা ভুলেও খাবেন না এই পানীয়?
• শরীরে পর্যাপ্ত জল থাকা জরুরিঃ বৃষ্টির দিনে অনেকে জল খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেন। অথচ পর্যাপ্ত জল না খেলে জয়েন্টের লুব্রিকেশন কমে যায়, ফলে ব্যথা বাড়তে পারে। জয়েন্টের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত পর্যাপ্ত জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
• ভঙ্গি ও চলাফেরায় সচেতনতাঃ বর্ষার সময় ঘরে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়। তাই প্রতি ৪৫ মিনিট অন্তর দাঁড়িয়ে হালকা স্ট্রেচ করা উচিত। চেয়ার ব্যবহারে সঠিক ব্যাক সাপোর্ট থাকা প্রয়োজন, নাহলে কোমর ও হাঁটুর ব্যথা বাড়তে পারে।
• ভেজা মেঝেতে সাবধানতাঃ বর্ষার দিনে ভেজা মেঝে ও পিচ্ছিল রাস্তায় পড়ে গিয়ে ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নন-স্লিপ জুতা ব্যবহার করতে হবে এবং ভেজা স্থানে হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে ঘরের বাথরুমে বা সিঁড়িতে সেফটি রেলিং লাগানো যেতে পারে।
• ওজন নিয়ন্ত্রণঃ অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। হাঁটু ও হিপ জয়েন্টের ক্ষয় দ্রুত হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সামান্য ওজন কমালেও জয়েন্টের ওপর চাপ কমে যায় এবং ব্যথা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

• পুষ্টিকর খাবার ও ব্যায়ামঃ বর্ষার সময় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার যেমন আদা, হলুদ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ, বাদাম ও সবুজ শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং বা ঘরে হালকা হাঁটাচলা জয়েন্টকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
• পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়ামঃ বর্ষাকালে সীমিত সূর্যালোক ভিটামিন ডি উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তাই হাড় এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, পনির এবং শাকসবজি খান।
যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তীব্র হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে তা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রোধ করতে পারে।
