আজ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত কৌতুকশিল্পী ও সঞ্চালিকা ভারতী সিং। মঞ্চে তাঁর মজার কৌতুক, ঝরঝরে উপস্থিতি, হাসির ঝড়ে ভেসে যান দর্শকরা। কিন্তু এই সাফল্যের আলো পৌঁছতে ভর্তি সিংকে হাঁটতে হয়েছে দীর্ঘ আঁধারের গলি পেরিয়ে। শৈশবেই বাবাকে হারানো, মায়ের গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালানো থেকে শুরু করে জীবনের নানা ঘাতপ্রতিঘাত—সবকিছুই পেরিয়ে এসেছেন তিনি।

 

সম্প্রতি, এক আলোচনায় কৈশোরের এক গভীর আঘাতের স্মৃতি উন্মোচন করলেন। তিনি জানালেন, জীবনের এক পর্যায়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রতিদিন শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তিনি। তবে তার পাশাপাশি তিনি এও জানাতে ভোলেননি যে প্রথমাবস্থায় তিনি বুঝতেই পারতেন না তাঁকে যে কৌশলে যৌন হেনস্থা করা হচ্ছে।

 

ভারতীর কথায়, “ কৌশোরে যখন টাকার প্রচণ্ড অভাব ছিল, তখন টাকার জন্য আমি কলেজে গিয়ে কমেডি স্কিট করাতাম। সেই বয়সে আমি ‘গুড টাচ-ব্যা ড টাচ’ ব্যাপারটাই জানতাম না। আজকের মেয়েরা স্কুলেই এসব শেখে, কিন্তু আমাদের সময়ে কেউ বলেনি।”

 

তিনি আরও জানান, পড়াশোনার ফাঁকে সপ্তাহে তিনদিন ছুটি নিয়ে ভোরবেলায় ৫টার বাসে করে এক বন্ধুর সঙ্গে ছোট ছোট কলেজে যেতেন। সেই বাস ভর্তি থাকত দুধবিক্রেতাদের ভিড়ে। সেখানে ঠাসাঠাসি ভিড়ে প্রতিদিন অশালীনভাবে ছোঁয়া হত তাঁকে। কিন্তু  কিশোরী ভারতী সরল থাকার সুবাদে ভাবতেন, লোকটা হয়তো পড়ে যাচ্ছিল, তাই শরীরের ওইখানে হাত পড়েছে। “প্রায় দেড়-দুই বছর পর বুঝেছিলাম, এসব কোনও দুর্ঘটনা নয়, আমাকে ইচ্ছে করেই স্পর্শ করা হচ্ছে,”— অকপট স্বীকারোক্তি ভারতীর। 

 

এই যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তখন পরিবার বা সমাজে এ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হত না। বাড়ির মহিলারাও এ বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করতেন। ফলে ছোটবেলায় কেউ শেখায়নি তাঁকে সঠিক-ভুল ছোঁয়া আলাদা করতে। আজ অবশ্য সেই আঁধার পেরিয়ে ভারতী  সিং জ্বলজ্বল করা এক নাম। সম্প্রতি তিনি ‘লাফটার শেফস ২’-এর সঞ্চালক হিসেবে দর্শকের মন জিতেছেন। পাশাপাশি স্বামী হর্ষ লিম্বাচিয়ার সঙ্গে ব্যস্ত আছেন তাঁদের নিজস্ব পডকাস্ট ‘ভারতী টিভি’ নিয়ে।
ভারতীর এই অকপট স্বীকারোক্তি একদিকে যেমন সমাজের গোপন অন্ধকারকে সামনে আনে, অন্যদিকে প্রমাণ করে—অসংখ্য লড়াই, অপমান আর আঘাতের ভিতর দিয়েই গড়ে ওঠে আসল সাফল্যের গল্প।