আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের ঘরে ঘরে একসময় বাঁসী রুটি ছিল নিত্যদিনের খাবারের অংশ। আজকের শহুরে জীবন ও ফ্রিজ সংস্কৃতির ভিড়ে অনেকেই আগের দিনের রুটি ফেলে দেন, কিন্তু আয়ুর্বেদের দৃষ্টিতে এটি নিতান্ত অপচয়। প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র মনে করে, সঠিকভাবে সংরক্ষিত বাঁসী রুটি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, শরীরের জন্যও বহুমুখী উপকারী।

 

নিচে আয়ুর্বেদের আলোকে বাঁসী রুটির দশটি প্রধান স্বাস্থ্যগুণ তুলে ধরা হলো—

 

 

 

১. হজমশক্তি বাড়ায়

আয়ুর্বেদ মতে, বাঁসী রুটি পেটে তুলনামূলকভাবে হালকা হয়। একদিন রেখে দিলে রুটির আর্দ্রতা কমে যায়, ফলে তা সহজে হজম হয়। যাদের হজমশক্তি দুর্বল বা অগ্নি (Agni) কম, তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী।

 

২. দোষের ভারসাম্য রক্ষা করে

বাঁসী রুটির শুকনো ও হালকা গুণ কফ দোষ কমায় এবং এর উষ্ণ প্রভাব বাত দোষের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে বেশিরভাগ শরীরপ্রকৃতির মানুষের জন্য এটি খাওয়া নিরাপদ।

 

৩. গ্যাস ও পেটফাঁপা কমায়

তাজা রুটি অনেক সময় গ্যাস ও পেটফাঁপার কারণ হতে পারে, বিশেষত যাদের হজম সংবেদনশীল। বাঁসী রুটি এই সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে আরাম দেয়।

 

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

তাজা রুটির তুলনায় বাঁসী রুটিতে ক্যালোরি কম থাকে। এছাড়া এর আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় শরীরে অপ্রয়োজনীয় জলধারণও নিয়ন্ত্রিত হয়।

 

৫. পুষ্টি শোষণ বাড়ায়

একদিন রাখার ফলে রুটির জটিল কার্বোহাইড্রেট ভেঙে সহজ আকার ধারণ করে, ফলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান দ্রুত ও কার্যকরভাবে শোষণ করতে পারে।

 

৬. অগ্নি (হজমশক্তি) জাগ্রত করে

আয়ুর্বেদে অগ্নি বজায় রাখা স্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি হিসেবে ধরা হয়। বাঁসী রুটি অগ্নিকে উত্তেজিত করে, কিন্তু অতি বোঝা দেয় না—ফলে হজম ও বিপাক ক্রিয়া দুটোই উন্নত হয়।

 

৭. শরীর ঠান্ডা রাখে

হজমের পর বাঁসী রুটি শরীরে শীতল প্রভাব ফেলে, যা গরমের সময় বা পিত্ত দোষ বেশি থাকা ব্যক্তিদের জন্য আরামদায়ক।

 

৮. খাদ্য অপচয় রোধ করে

আগের দিনের রুটি না ফেলে খাওয়া পরিবেশবান্ধব অভ্যাস। এতে খাদ্য অপচয় কমে এবং সচেতন খাদ্যভোগের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

 

৯. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

একদিন রাখলে রুটিতে প্রিবায়োটিক উপাদান গঠিত হয়, যা অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। সুস্থ অন্ত্রই শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার মূলভিত্তি।

 

১০. দীর্ঘস্থায়ী শক্তি যোগায়

বাঁসী রুটির পরিবর্তিত কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে, ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ ওঠানামা কম হয় এবং সারাদিন এনার্জি বজায় থাকে।

 

 

 

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাঁসী রুটি অবশ্যই পরিষ্কার পরিবেশে, ঢাকা দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত। তাতে যেন ছত্রাক না ধরে এবং অতিরিক্ত আর্দ্র না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। সঠিকভাবে সংরক্ষিত বাঁসী রুটি শুধু ঐতিহ্য রক্ষা করে না, বরং স্বাস্থ্য সচেতন আধুনিক জীবনযাপনের অংশও হতে পারে।