আজকাল ওয়েবডেস্ক: নামে পথকুকুর। অচেনা কাউকে দেখলে ঘেউঘেউ করে ঠিকই, কিন্তু এমন কত পাড়া রয়েছে, যেখানে পথকুকুরদের ভরসায় নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমোতে যান মানুষ। তবে এবার থেকে আর নয়। আদালতের রায়ে, আমূল বদলে যাবে সমাজের ছবিটাই। দিল্লি। দিল্লির পর রাজস্থান। রাজপ্রাসাদের নগর, মরুভূমি, কোথাও হাঁটতে হাঁটতে আর পথকুকুরদের ঘেউঘেউ শুনতে পাবেন না।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, রাজস্থান হাইকোর্ট একটি স্বতঃপ্রণোদিত আবেদনে এই নির্দেশ দিয়েছে। জানানো হয়েছে, রাস্তা থেকে পথকুকুর এবং অন্যান্য প্রাণীদের সরিয়ে নিতে হবে অবিলম্বে। কুকিরের কামড়ও সেখানে পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিল বলে জানা গিয়েছে। ঠিক তার আগেই, সোমবার শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি-এনসিআরের সব পথ কুকুরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে। এমনকি, এই কার্যক্রমে বাধা দিলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের।
জানা গিয়েছে, ১১ আগস্টই রাজস্থান হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, শহরের রাস্তা থেকে সমস্ত পথকুকুরদের এবং অনায়ন্য প্রাণীদের সরিয়ে নিতে হবে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, অইসব প্রাণীর ন্যূনতম শারীরিক ক্ষতি নিশ্চিত করতে হবে। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে যে রাস্তা, কলোনি, জনসাধারণের চলাফেরার পথ থেকে এইসব প্রাণী অপসারণে পৌর সংস্থাগুলির কাজে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তাদের কাজের পথে বাধা সৃষ্টিকারী, সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য পালনে বাধা প্রদানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলেও খবর সূত্রের।
আরও পড়ুন: স্কুলে ফেল করে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, কিশোরীকে একা পেয়ে জোর করে সঙ্গম-যৌন নির্যাতন শয়ে শয়ে মানুষের
যোধপুর পৌর কর্পোরেশনের কাছে এইমস, যোধপুর এবং জেলা আদালত, এই দুটি স্থান, মূলত যেখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়, সেখান থেকে পথকুকুর এবং অনায়ন্য প্রাণীদের অপসারণের জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য মহাসড়ক কর্তৃপক্ষকে নিয়মিতভাবে মহাসড়কে টহল দেওয়ার এবং যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, যদি কেউ পথ কুকুক, গবাদি পশুদের খাওয়াতে চান, তাহলে নির্দিষ্ট স্থান, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে এবার থেকে।
দিল্লিতে পথকুকুরদের উপর নির্দেশিকা প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে দিল্লিতে কুকুরের কামড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং রেবিস আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি জে বি পারদেওয়ালা এবং আর মহাদেবনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। বেঞ্চ জানিয়েছে, কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনও পক্ষের তরফে শুনানি হবে না। বেঞ্চের বক্তব্য, ‘আমরা এই কাজ আমাদের জন্য করছি না, এটি জনস্বার্থে। তাই এখানে কোনও আবেগের স্থান নেই। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে’। আদালতের বেঞ্চের স্পষ্ট বার্তা, ‘সব জায়গা থেকে কুকুরকে তুলে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। আপাতত নিয়ম-কানুন ভুলে যান’।
এর আগে আমিকাস কুরাই গৌরব আগরওয়ালা সুপারিশ করেছিলেন কীভাবে পথ কুকুর সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘কুকুরদের গৃহপালিত করার ব্যাপার আপাতত বিবেচনা করা হচ্ছে না। তাতে পরে তাদের আবার ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে’। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, ‘দিল্লিতে একটি আলাদা জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে কুকুরদের স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু পশু অধিকারকর্মীদের আপিলের কারণে প্রকল্প আটকে গেছে। আদালতের বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে কঠোর ভাষায় জানিয়েছে, ‘এসব পশু অধিকার কর্মীরা কি রেবিস আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষদের ফিরিয়ে আনতে পারবেন? রাস্তাকে সম্পূর্ণ পথ কুকুর মুক্ত করতে হবে’। দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ এবং গুরগাঁও সহ দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের পৌর প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত কুকুরদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার। পথ কুকুরদের উদ্ধার করে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
