আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি উত্তরকাশী থেকে গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথে নেতালার কাছে একটি বড় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার ফলে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। সোমবার সকালেই এই ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে। খবর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার জেরে রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গাঙ্গনানি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড় ধসে বিপুল পরিমাণ মাটি ও পাথর রাস্তার ওপর পড়ে যায়। এর ফলে পথটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাস্তা পরিষ্কারের জন্য ইতিমধ্যে ভারী যন্ত্রপাতি, যেমন জেসিবি মেশিন মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তা পুনরুদ্ধারের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে রাজ্যজুড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সেই কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।
এই ঘটনার আগে সম্প্রতি উত্তরকাশী জেলায় প্রবল মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে। ওই দুর্যোগের ফলে ধারালি সহ একাধিক এলাকায় আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধস দেখা দেয়। ফলস্বরূপ কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম সূত্র অনুযায়ী উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ আজ ষষ্ঠ দিন অতিক্রম করেছে।
সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, রবিবারের প্রবল বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজে আবারও বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে ধারালি এলাকায়। সেখানকার শুকনো কাদা বৃষ্টির জলে ভিজে কাদামাটিতে পরিণত হয়েছে, যার ফলে উদ্ধারকারী দলগুলোর চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মোট ১,৩০৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ ২৪ ঘণ্টা চালানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে সরকার সর্বতোভাবে থাকবে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জানিয়েছে, উত্তরকাশী জেলাজুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, সন্ধ্যা ও রাতে কিছু কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। আগামী ছয় ঘণ্টার জন্য জারি করা নাউকাস্ট অনুযায়ী, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং বৃষ্টিপাত চলতে পারে। এর ফলে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে আরও সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের অনুরোধ করা হয়েছে যেন কেউ প্রয়োজন ছাড়া দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় যাত্রা না করেন। বিশেষত ভূমিধসপ্রবণ এলাকা এড়িয়ে চলেন। স্থানীয় প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে৷ এর কারণ হিসেবে অনুমান করা হয়েছে আবহাওয়ার এমনতর দোলাচল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুনঃ উদ্ধারকাজে বাধা বৃষ্টি! উত্তরকাশী বন্যায় নিখোঁজ একাধিক, ফের 'রেড অ্যালার্ট' রাজ্যজুড়ে ...
প্রসঙ্গত, এই দুর্যোগে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে তাঁদের পরিবার-পরিজন, ঘরবাড়ি, এমনকি কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছেন। ভয়াবহ বন্যার স্রোতে কেবল একাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট নয়, বরং একাধিক মানুষের জীবন সম্পূর্ণভাবে ভেসে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৫,০০০ টাকার চেক ‘তাৎক্ষণিক সাহায্য’ হিসেবে দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ মানুষের মতে তাঁদের দুঃখ-কষ্টের তুলনায় এটি কিছুই নয়।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেকেই এই চেক নিতে অস্বীকার করেন। এমনকি এটিকে তাঁদের কষ্টের প্রতি এক ধরনের অবমাননা হিসেবে দেখছেন তাঁরা। এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, 'আমরা সব কিছু হারিয়েছি। আমাদের পরিবার, ঘরবাড়ি, ব্যবসা, জীবনের সমস্ত সহায়-সম্বল। এই ৫,০০০ টাকা দেওয়া মানে আমাদের সেই কষ্টকে তুচ্ছ করে দেখা। এটা আমাদের জন্য অপমান।'
