আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়ি থেকে চুপিসারেই বেরিয়ে পড়েছিলেন যুবতী। সঙ্গে ছিল তিন নাবালক সন্তান। কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, স্বামী সহ কাউকেই জানাননি তিনি। ফলে কেউই টের পাননি কখন তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। আর যে কখনও বাড়ি ফিরবেন না, তখনও বুঝতে পারেননি কেউ। পারিবারিক অশান্তির জেরে সন্তানদের নিয়ে মায়ের চরম পদক্ষেপে শিউরে উঠলেন সকলে।
তিন সন্তানকে নিয়ে সোজা খালের ধারে চলে গিয়েছিলেন মা। সেখানে পৌঁছেই তিন সন্তানকে ওড়না দিয়ে বেঁধে দেন। তারপর তিনজনের হাত ধরে নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়েন খালে। পরদিন সকালে সেই খাল থেকে উদ্ধার হল মা সহ তিন নাবালক সন্তানের নিথর দেহ। টানা কয়েক ঘণ্টা তল্লাশি অভিযান চালানোর পর দেহগুলি উদ্ধার করতে পেরেছে ডুবুরি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে বান্দা জেলার রিসৌরা গ্রামে। গতকাল দুই নাবালক ও এক নাবালিকা সন্তানকে নিয়ে স্থানীয় একটি খালে ঝাঁপ দেন এক মহিলা। মৃত যুবতীর নাম, রীনা। তাঁর তিন সন্তানই নাবালক। দুই ছেলের বয়স নয় ও তিন বছর। নাবালিকার বয়স ছিল পাঁচ বছর।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই বচসা হত রীনা। দাম্পত্য কলহের বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন প্রতিবেশীরাও। শুক্রবার রাতেও রীনার স্বামী অখিলেশের সঙ্গে তাঁর তুমুল অশান্তি হয়। যা মিটমাট না করেই, সেদিন রাতে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান রীনা। শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তিনি কাউকেই বিষয়টি জানাননি।
বাড়ি চারজনে বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তায় পড়েন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। রাত থেকেই রীনা ও তাঁর তিন সন্তানের খোঁজ শুরু করেন সকলে মিলে। খুঁজতে খুঁজতে ওই খালের ধারে পৌঁছে হকচকিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। সেই খালের ধারেই রাখা ছিল রীনা ও তাঁর সন্তানদের পোশাক, হাতের চুড়ি, ব্রেসলেট, চটি, জুতো এবং আরও সামগ্রী। আশেপাশে খুঁজেও মা ও সন্তানদের না পাওয়ায়, তড়িঘড়ি করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছয় পুলিশ। সেখানে পৌঁছেই পুলিশের সন্দেহ হয়, সম্ভবত তিন সন্তানকে নিয়ে রীনা খালে ঝাঁপ দিয়েছেন। সন্দেহের কারণে খালে ডুবুরি নামায় পুলিশ। খানিকক্ষণ তল্লাশির পর খাল থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।
বান্দার পুলিশ আধিকারিক শিব রাজ জানিয়েছেন, 'খালের জলস্তর খানিকটা কমিয়ে আমাদের নির্দেশে ডুবুরি নামানো হয়েছিল। টানা পাঁচ দিন ছ' ঘণ্টা তল্লাশি অভিযান চালানোর পর ওই খাল থেকে এক মহিলা ও তাঁর তিন নাবালক সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একটি কাপড় দিয়ে সকলের দেহ একসঙ্গে বাঁধা ছিল। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, স্বামীর সঙ্গে ঝামেলার পর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন যুবতী। তারপর আর বাড়ি ফেরেননি।'
এই ঘটনার পরেই রীনার স্বামী অখিলেশকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী কারণে রীনার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই ঘটনায় একটি মামলা রুজু করেছে তারা। ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে।
