আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভরা বর্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী। পরপর মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ হড়পা বান। তার জেরে ঘরছাড়া শ'য়ে শ'য়ে স্থানীয় বাসিন্দা। হড়পা বানে কারও ভেসে গেছে বাড়ি, কারও প্রিয়জন, কোথাও আবার গোটা পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নেই। 

 

এই পরিস্থিতিতে দুর্গতদের হাতে মাত্র পাঁচ হাজার চেক তুলে দেওয়া হয় উত্তরাখণ্ড সরকারের তরফে। যা ঘিরে তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন দুর্গতরা। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, অনেকেই সেই চেক নিতে অস্বীকার করেছেন‌। তাঁদের মতে, এমন দুর্ভোগের পরেও সরকারের তরফে যে অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা অত্যন্ত সামান্য। এটা দুর্গতদের প্রতি চরম অবহেলার নিদর্শন। অপমানেরও বটে। 

 

একজন গ্রামবাসী বলেছেন, 'হড়পা বানে আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের পরিবার, বাড়ি, কোটি টাকার ব্যবসা তছনছ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া সত্যিই অপমানজনক।' হড়পা বানের পর থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। টানা চারদিন শুধুমাত্র মোমবাতি জ্বালিয়ে রয়েছেন তাঁরা। 

 

আরও এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, 'গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। আমরা এখনও অন্ধকারে আছি। কাঠ জ্বালিয়ে খাবার তৈরি করছি। সরকারের তরফে রেশন দেওয়া হবে জানিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও রেশন আমাদের কাছে পৌঁছয়নি। লোকজনের ঘরে ঘরে ঘুরে আমরা একটু খাবার সংগ্রহ করছি।' 

 

আরও পড়ুন: 'আর পারছিলাম না...', পথকুকুরের সঙ্গে জোর করে সঙ্গম, তরুণের কীর্তি দেখে শিউরে উঠলেন সকলে, শেষমেশ যা হল

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হড়পা বানে মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই টাকা এসে পৌঁছয়নি তাঁদের কাছে। যা ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সকলেই। 

 

প্রসঙ্গত, উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে প্রবল মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান বিশাল ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে প্রাথমিকভাবে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ভয়াবহ দুর্যোগে গঙ্গোত্রী ধামের সঙ্গে সমস্ত রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অবস্থিত গঙ্গার শীতকালীন আসন মুখবা ও পবিত্র গঙ্গোত্রী ধাম। পর্যটকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রবাহ ধেয়ে আসছে নিচের দিকে, একের পর এক বাড়ি ও গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হরশিল অঞ্চলের খীর গাধ নালার উপচে পড়া জলের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। 

 

নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গোটা গ্রাম। বাড়ি, হোটেল, হোমস্টে, রেঁস্তোরা, দোকানপাট, আর কিছুরই নেই চিহ্ন। এই উত্তরকাশীতে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেই মৃত্যুমিছিল বাড়ছে। বুধবার আরও বাড়ল মৃতের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ। নিখোঁজের সংখ্যাও শতাধিক ছিল। গতকাল, মঙ্গলবার, প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, হড়পা বানে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে সেনা বাহিনীর ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন। 

 

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এক হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পুণ্যার্থী ও ভিন রাজ্যের বাসিন্দা রয়েছেন। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাস ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে রেশন দেবে রাজ্য সরকার। তিন জন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্গতদের কাছে রেশন, আর্থিক ক্ষতিপূরণ সময় মতো পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি তাঁরাই দেখাশোনা করবেন।