ভরা বর্ষায় কলকাতা হাবুডুবু। আকাশের মুখ ভার হয়েই আছে। সঙ্গী কখনও ঝিরঝির, কখনও ঝমঝম বৃষ্টি। বাড়িতে বসে তাকে উপভোগ করতে কার না ভাল লাগে! কিন্তু বেরোতে হলে? ছাতা-রেনকোটই যে বিপদভঞ্জন!
প্রয়োজনেই শুরু হয়েছিল ব্যবহার। ক্রমে সেই বিপদের বন্ধু হয়ে উঠেছে বর্ষার সাজের অঙ্গ। আর সেই সঙ্গেই তাতে এসেছে নানা ভাবনা, এসেছে হরেক প্রযুক্তির কারিকুরিও। ছাতার ফ্যাশনকে তাই ছাতার মাথা বলে উড়িয়ে দেওয়া মোটেই কাজের কথা নয়! বরং জেনে নিন ট্রেন্ডিং ছাতার সাতসতেরো।
লক্ষ্য পরিবেশ রক্ষা
দূষণের হাত থেকে রেহাই খুঁজে প্রকৃতি-পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন সাসটেনেবিলিটির ছোঁয়া লেগেছে ফ্যাশনেও। ছাতাই বা বাদ যাবে কেন! তাই ওশন প্লাস্টিক থেকে তৈরি রিসাইকলেড পলিয়েস্টার কাপড়ে তৈরি হচ্ছে ছাতা। কিংবা ছাতার ক্যানোপি তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে বায়োডিগ্রেডেবল উপকরণ। যাতে বাতিল ছাতার অংশ সহজে মিশে যেতে পারে পরিবেশেই। প্লাস্টিক বা সিন্থেটিকে নয়, ছাতার হ্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে বাঁশ বা কাঠে। ছাতা রং করতেও ব্যবহার হচ্ছে ওয়াটার-বেসড, নন টক্সিক রং, যাতে রাসায়নিকের ব্যবহার যথাসম্ভব কম করা যায়।
ছাতাও এখন স্মার্ট
আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে ছাতাতেও। এলইডি লাইট লাগানো ছাতায় বর্ষার রাতে চলাফেরা সহজ হয়েছে অনেকটা। হ্যান্ডেলে থাকা সোলার চার্জিং পয়েন্ট রোদমাখা দিনগুলোয় জমিয়ে রাখছে বাড়তি চার্জ। বর্ষায় বাইরে বেরোনোর প্ল্যান করছেন? ব্লু-টুথ প্রযুক্তিতে বিভিন্ন ওয়েদার অ্যাপের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে ছাতাই এখন জানিয়ে দিতে পারছে কবে, কখন বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি, ছাতা হারাতে যাঁরা সিদ্ধহস্ত, লোকেশন ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সংবলিত ছাতাই এখন তাদের জানিয়ে দিচ্ছে কোথায় সে একা পড়ে রয়েছে!
সহজে ব্যবহারের বন্দোবস্ত
আগের মতো ছাতা মানেই ব্যাগ ভারী বা ওজন বয়ে চলা নয়, ছাতা এখন আকারে অনেক ছোট, অনেকটা হাল্কাও বটে। ফলে ব্যাগে রাখা বা হাতে ঝোলানো, দুটোই সহজ হয়ে গিয়েছে বেশ। ভাঁজ করে, গুটিয়ে রেখে এক্কেবারে ছোট্টটি। এদিকে বোতামে চাপ দিলেই প্রমাণ সাইজে খুলে গিয়ে তুমুল বৃষ্টিতেও আপনাকে রাখবে শুকনো। ছাতার ক্যানোপিও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উইন্ড রেসিস্ট্যান্ট। ফলে ঝড়-বৃষ্টিতে বাড়তি সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
মনের রঙে ছাতা
একঘেয়ে কালো বা যেমন-তেমন প্রিন্ট নয়, ছাতাও কিন্তু এখন মনের কথা বলে! রীতিমতো কালার সাইকোলজি মেনে ছাতা সেজে ওঠে নানা রঙে। ফলে ঠিকমতো ছাতার রং বাছাই আপনার মনের রঙের খবরও জানিয়ে দেবে সকলকে। কী ভাবে জানেন?
লাল: আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, ধূসর-বিষন্ন আবহাওয়ায় নজর টানতে ওস্তাদ
নীল: গাঢ় নীলে আভিজাত্যের ছোঁয়া, হাল্কা নীলে শান্তির পরশ। চনমনে, আধুনিক দেখাতে কোবাল্ট কিংবা ইলেক্ট্রিক ব্লু
সবুজ: সবুজের নানা শেডে পরিবেশ রক্ষার বার্তা
হলুদ: কালচে হয়ে থাকা দিনগুলোয় একমুঠো উজ্জ্বলতা, সঙ্গে সহজে চোখে পড়ার সুরক্ষাও
কালো: চিরাচরিত আভিজাত্যে নজর কাড়া
ছাতায় সাজের বাহার
ছাতা যখন ফ্যাশনের অঙ্গ, তাতে সাজ-দুনিয়ার হরেক এক্সপেরিমেন্টও যে জায়গা করে নেবে, তাতে আর সন্দেহ কী! ছাতার ডিজাইনে তাই জায়গা করে নিচ্ছে বোল্ড টাইপোগ্রাফি। নানা ধরনের কোট আপনার বার্তা হয়ে সাজিয়ে তুলছে ছাতাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার ছাতা ভিজলে তবেই ফুটে উঠছে লেখা। ছাতা হয়ে উঠছে ক্যানভাসও। তাতে মনের সুখে আঁকা ছবি বা ডিজাইনে ধরা থাকছে শিল্পসৃষ্টি। অনেক ক্ষেত্রে ছাতার ক্যানোপির বাইরেটায় যখন নানা রকম প্রিন্ট বা ডিজাইনে, ভিতর দিকটা রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে আকাশের মতো করে, যাতে মনে হয় ঝলমলে আকাশের নীচেই আপনি দাঁড়িয়ে। ফ্যাশন ট্রেন্ড মেনে ক্যানোপিতে যেমন জায়গা করে নিচ্ছে নানা রকম প্রিন্ট, তেমনই থাকছে হরেক রকম এমবসড এলিমেন্ট, মেটালিক অ্যাক্সেন্ট, বা ম্যাট-গ্লস ফিনিশও।
তা হলে বুঝছেন তো? এখন স্রেফ চেনা ছাতায় আটকে নেই বর্ষার সবচেয়ে দরকারি জিনিসটা!
