আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মালেগাঁও শহরের একটি মসজিদের সামনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনায় অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়েছে আদালত। বিচারকের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিস্ফোরণটি কোনো বৃহৎ চক্রান্তের অংশ ছিল, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই রায় একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, বিশেষ করে সেই ২০১১ সালের সেই স্বামী অসীমানন্দের স্বীকারোক্তি ও হেমন্ত কারকরের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে।

মুম্বই ATS-এর তৎকালীন প্রধান হেমন্ত কারকরের তদন্তে উঠে আসে ‘অভিনব ভারত’ নামক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সক্রিয় ভূমিকা। রিপোর্টে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সংক্রান্ত চারটি বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে জড়িত ছিলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত, মেজর উপাধ্যায় ও স্বামী অমৃতানন্দ সহ আরও অনেকে।

এই তথাকথিত গোপন সভাগুলির অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, কীভাবে মুসলিমদের আতঙ্কিত করতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হয়। পুরোহিত সরাসরি বলেন, “আমরা সংবিধানের বিরুদ্ধে লড়াই করব, বৈদিক ধর্ম অনুযায়ী রাষ্ট্র গড়ব।” এমনকি, এক সভায় তিনি দাবি করেন, অভিনব ভারত তিনটি বিস্ফোরণে জড়িত ছিল – যার মধ্যে মালেগাঁও অন্যতম। পুরোহিত জানান, ইজরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। পাশাপাশি নেপালে রাজতন্ত্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল, যারা দিল্লিতে অফিস খুলতে ও সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত ছিল।

আরও পড়ুন:মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ল: সংসদে গৃহীত প্রস্তাব, বিরোধিতার মাঝে উত্তাল বিতর্ক

অভিনব ভারত মূলত তৈরি হয়েছিল সংঘ পরিবারের প্রতি অসন্তোষ থেকে—বিশেষত তাদের "ধীরগতি কৌশল" নিয়ে। এই সংগঠনের সদস্যরা সরাসরি সশস্ত্র প্রতিরোধ ও বিস্ফোরণকে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিল। স্বামী অসীমানন্দের ১৬৪ ধারায় দেওয়া আদালতে স্বীকৃত জবানবন্দি অনুযায়ী, মালেগাঁও ছাড়াও সামঝোতা এক্সপ্রেস, হায়দরাবাদ মক্কা মসজিদ, আজমের দরগাহ ও মোদাসা বিস্ফোরণেও জড়িত ছিল একই মেরুদণ্ড – যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সংঘ নেতা ইন্দ্রেশ কুমার, প্রচারক সুনীল জোশী ও সানদীপ ডাঙ্গে।

মালেগাঁও মামলায় মূল অভিযুক্তদের সবাই উচ্চস্তরের ব্যক্তি – সেনা অফিসার, ধর্মগুরু বা সংঘ পরিবারের কর্মী। অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ কেউ সংসদ সদস্যও ছিলেন। আদালতের রায়ে তাঁরা বেকসুর খালাস পেলেও, তদন্ত নথি ও স্বীকারোক্তিতে যে চিত্র উঠে আসে, তা ভারতের বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। এখন প্রশ্ন উঠছে—যখন অভিযুক্তরা সুপরিচিত সংগঠনের সদস্য এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ, তখন কি তাঁদের জন্য আইনের শাসন আলাদা হয়? সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া এই ধরণের হিংসাত্মক ঘটনায় বিচার না হওয়া মানে কি আইন শুধু কিছু নির্দিষ্ট মানুষের জন্য প্রযোজ্য? নাকি গণতন্ত্রের ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে উঠছে?