আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তাল বিতর্ক ও বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যেই মঙ্গলবার রাজ্যসভায় গৃহীত হলো মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসনের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব। এই প্রস্তাব লোকসভায় ইতিমধ্যেই পাশ হয়েছিল গত সপ্তাহে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৩ আগস্ট থেকে মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হলো। রাজ্যসভায় বিতর্কের সময় বিরোধীরা বিহারে বিশেষ নিবন্ধন পুনর্বীক্ষণ (Special Intensive Revision বা SIR) ইস্যুতে হট্টগোল শুরু করলে উপসভারপতি হরিবংশ জানান, এটি একটি "সংবিধানিক কর্তব্য"। তিনি বলেন, "এটি একটি বিধিসম্মত প্রস্তাব (Statutory Resolution)। আমাদের সকল সাংসদের সংবিধান অনুসরণ করাই কর্তব্য। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এটি পাস করতেই হবে।" এরপর ওয়াইএসআর কংগ্রেস সাংসদ সুবাষচন্দ্র বোস পিল্লিকে আলোচনায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এদিকে, বিজেডি সাংসদ মুজিবুল্লা খান প্রশ্ন তোলেন ওড়িশার পরিস্থিতি নিয়েও। তিনি বলেন, “যখন মণিপুরে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খারাপ ছিল, তখন ৩৫৬ ধারা জারি করা হয়। আজ ওড়িশার পরিস্থিতিও খুব খারাপ। তাহলে মণিপুরে 'ডাবল ইঞ্জিন' সরকার ব্যর্থ হল কেন? রাষ্ট্রপতির শাসন জারির এত মাস পরেও পরিস্থিতির কি উন্নতি হয়েছে?” তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “এক নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে বারবার রাষ্ট্রপতির শাসন চাপিয়ে দেওয়া কখনওই গণতান্ত্রিক পন্থা নয়। এর দায় কেন্দ্রকেই নিতে হবে।”

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দাবি: "শান্তি এসেছে"

এই প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। তিনি বলেন, মণিপুরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় একটি উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে। তাঁর বক্তব্য, “এটিকে ধর্মীয় হিংসা বলা ভুল হবে।” রাই আরও দাবি করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ব্যক্তিগতভাবে হিংসাপ্রবণ অঞ্চলগুলি পরিদর্শন করেছেন, উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও সিভিল সোসাইটি সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি জানান, “রাষ্ট্রপতির শাসন চালু হওয়ার পর মণিপুরে শুধু একটি হিংসার  ঘটনা ঘটেছে।” লোকসভাতেও একই বক্তব্য রেখেছিলেন রাই। তাঁর যুক্তি, যেহেতু শান্তি ফিরে এসেছে, তাই রাষ্ট্রপতির শাসনের মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন।

বাস্তব চিত্র: হিংসা  ও কারফিউ এখনও চলছে 

যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ‘শান্তি’ ফিরে আসার দাবি করা হলেও বাস্তবে এখনও মণিপুরে হিংসা, সংঘর্ষ, কারফিউ ও জাতিগত বিভাজন অব্যাহত। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও সেনা মোতায়েন, চলাচলে বিধিনিষেধ এবং আন্ত-সম্প্রদায়িক উত্তেজনা রয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী এন. বিরেন সিং পদত্যাগ করেন। তখনই রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদে প্রস্তাবটি পাস হয় এপ্রিল মাসে, দুটি মধ্যরাতের অধিবেশনের মাধ্যমে। উল্লেখ্য, মণিপুরে গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মেইতেই ও কুকি-জো জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ চলছে। এই দীর্ঘস্থায়ী হিংসা মণিপুরের সামাজিক কাঠামোকে তছনছ করে দিয়েছে। বহু মানুষ গৃহচ্যুত, অগণিত বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, হাজারো পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। রাষ্ট্রপতির শাসনের মেয়াদ বাড়ানোতে সরকার যেখানে শান্তির কথা বলছে, সেখানে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে—এই 'শান্তি' কতটা বাস্তব, আর কতটা প্রচার। একটি নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিতে, সাংবিধানিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।