বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও দেশপ্রেমের আবেগকে একত্র করে দেবজ্যোতি মিশ্র প্রোডাকশন নিয়ে এসেছে নতুন সুরের স্পর্শ। মুক্তি পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা’-র নতুন মিউজিক ভিডিও। গেয়েছেন জোনাকি মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সরণির চ্যাপ্টার ২-এ আয়োজিত হয়েছে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। নতুন আঙ্গিকে কবিগুরুর গান ছুঁয়েছে সকলের মন।
অনুষ্ঠানটির গোটা পুরো সন্ধে ভরে ওঠে আবেগ ও সঙ্গীতের নস্টালজিয়ায়, যেখানে বাউল ঐতিহ্যের সুরে নতুন প্রাণ পায় এই অমর গান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জোনাকি মুখোপাধ্যায়, সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র এবং প্রখ্যাত বাউল শিল্পী গৌতম দাস বাউল। তাঁরা একত্রে বাংলার সঙ্গীত ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে বাউল গানের আধ্যাত্মিক সত্তাকে নতুন করে উপলব্ধি করান।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ‘আমার সোনার বাংলা’ রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করে। তবে বরাবরই দুই বাংলার প্রাণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত ‘আমার সোনার বাংলা’। এই গানের সুরের মূল ভিত্তি গগন হরকরার রচিত বাউল গান ‘আমি কোথায় পাবো তারে’। অনুষ্ঠানে এই গানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গৌতম দাস বাউল পরিবেশন করেন মূল লোকগানটি যা অনুষ্ঠানের আবহকে করে তোলে আরও গভীর। একইসঙ্গে গগন হরকরার প্রতি এক অনন্য শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে গানের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক যোগসূত্রকে নতুন করে স্পষ্ট করে তোলা হয়।
আরও পড়ুনঃ ‘আপনাকে বিখ্যাত করব!’ অতি দেশপ্রেমী ট্রোলারকে কীভাবে ‘মৃগয়া’ করলেন ‘অ্যাকশন হিরো’ ঋত্বিক?
নতুন এই পরিবেশনায় জোনাকি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গানটি এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। তাঁর গানে ভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে, উঠে এসেছে গভীর আবেগ। যা গানটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলবে। দেবজ্যোতি মিশ্রের সুরে লোকসঙ্গীত ও ধ্রুপদী সুরের মিশ্রণ তৈরি করেছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা নতুন প্রজন্মকেও ছুঁয়ে যাবে বলেই আশা নির্মাতাদের।
শিল্পীদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে আবেগের প্রকাশ। গানটির মুক্তির মুহূর্তে দেবজ্যোতি মিশ্র বলেন, “আমার সোনার বাংলাকে নতুনভাবে সাজানো আমার কাছে ছিল এক আধ্যাত্মিক দায়িত্ব। আমরা সঙ্গীতের ভাষায় ফের আমাদের শিকড়ের গভীরতার সঙ্গে শ্রোতাদের যুক্ত করতে চেয়েছি। এটি বাংলার আত্মার প্রতি এক শ্রদ্ধাঞ্জলি।” অন্যদিকে, গায়িকা জোনাকি মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এই গান আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ। গানটি গাওয়া আমার কাছে কেবল একটি পরিবেশনা নয়, বরং আবেগ, শ্রদ্ধা ও গর্বে ভরা এক ব্যক্তিগত যাত্রা।”
অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে এক হৃদয়ছোঁয়া সঙ্গীত পরিবেশনা ছড়িয়ে দেয় শান্তি, ঐক্য ও গৌরবের বার্তা। ‘আমার সোনার বাংলা’-র নতুন এই পরিবেশনা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের হৃদয়ে অম্লান ছাপ ফেলবে, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
