আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজধানীর মহম্মদপুরে ঘটে গেছে এক চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা। বাসা থেকে দেড় কোটিরও বেশি টাকা চুরির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে যে মামলা করেছিলেন ঠিকাদার ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ, তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—এই চুরির পেছনে ছিলেন তাঁরই একমাত্র মেয়ে মিনা হামিদ ও মেয়ের স্বামী সাকিবুল হাসান। জানা গেছে, ঈদুল আজহার দুই দিন আগে আবদুল হামিদ তাঁর পরিবার নিয়ে ভোলার গ্রামের বাড়িতে যান। ঈদ শেষে ২০ জুন ঢাকায় ফেরেন তিনি। এরপর ১ জুলাই, অর্থাৎ ফেরার ১১ দিনের মাথায় তিনি বাসায় রাখা টাকা দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন, সিন্দুক থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা উধাও। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ দায় স্বীকার না করায় ৪ জুলাই তিনি মহম্মদপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা করেন। ওই সময় তাঁর মেয়ে মিনাও তাঁর সঙ্গে থানায় উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা ও চমকপ্রদ মোড়
মামলার তদন্তে নামে মহম্মদপুর থানা পুলিশ। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে পুলিশ সিন্দুক ভাঙার কোনো চিহ্ন না পাওয়ায় সন্দেহ করতে থাকে, ঘটনার সঙ্গে ঘরের কেউ জড়িত থাকতে পারে। এরপর তারা বাসার প্রত্যেককে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। টানা চার দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে, অবশেষে স্বীকার করেন মেয়ে মিনা হামিদ। তিনি জানান, সিন্দুকের তালা খুলে তিনি নিজেই টাকা বের করে দিয়েছেন এবং তা দিয়েছেন স্বামী সাকিবুল হাসানের হাতে।
আরও পড়ুন: ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবি: ১৫৪ আফ্রিকান অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে মৃত অন্তত ৬৮, নিখোঁজ ৭৪
প্রেম-বিয়ে-চুরি: এক গল্পে বহু টানাপড়েন
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মতিউর রহমান জানান, মিনা গত বছর তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস সাকিবুল হাসানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তবে তাঁদের সম্পর্ক পরিবার মেনে নেবে না বলেই আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। এ কারণে বাবার অগোচরে সিন্দুকের টাকা নিয়ে সাকিবুলকে দেন, যাতে স্বাধীনভাবে সংসার শুরু করতে পারেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাকিবুল স্বীকার করেন, স্ত্রী মিনার কাছ থেকে পাওয়া ৯০ লাখ টাকা মোটরসাইকেলে করে সিরাজগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান এবং সেখানে লুকিয়ে রাখেন।
গ্রেপ্তার ও টাকা উদ্ধার
মিনার তথ্য অনুযায়ী সাকিবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চুরির ৯০ লাখ টাকা। পুলিশ জানায়, চুরির অর্থের বাকি অংশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক ভূঞা বলেন, “ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের টাকা চুরির ঘটনায় তাঁর মেয়ে মিনা হামিদ ও মেয়ের স্বামী সাকিবুল হাসান সরাসরি জড়িত। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে পুরো ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।” বর্তমানে মিনা হামিদ ও সাকিবুল হাসান জেলহাজতে রয়েছেন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারে বিশ্বাসভঙ্গ এবং আর্থিক ক্ষতির এই নাটকীয় ঘটনায় মিশে আছে প্রেম, প্রতারণা, গোপন বিয়ে ও পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের এক বিস্ময়কর কাহিনি। তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ, তবে ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ এখনও পুরো অর্থ ফেরত পাবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
