আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইয়েমেনের উপকূলে রবিবার ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৬৮ জন আফ্রিকান অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ৭৪ জন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (IOM) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

১৫৪ জন অভিবাসী নিয়ে উল্টে যায় নৌকাটি

IOM-এর ইয়েমেন শাখার প্রধান আবদুসাত্তার এসোয়েভ জানিয়েছেন, ১৫৪ জন ইথিওপিয়ান অভিবাসীকে নিয়ে নৌকাটি ইয়েমেনের দক্ষিণ উপকূলীয় প্রদেশ আবইয়ান থেকে কিছুটা দূরে আদেন উপসাগরে ডুবে যায়। স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিক আবদুল কাদির বাজামিল বলেন, “এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে, যার মধ্যে ৯ জন ইথিওপীয় এবং ১ জন ইয়েমেনি।” সন্ধ্যার পরেও জলসন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক অভিবাসী পথ

IOM বহুবার সতর্ক করেছে যে, আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল (বিশেষত ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া) থেকে ইয়েমেন হয়ে সৌদি আরব বা উপসাগরীয় দেশগুলোতে যাওয়ার সমুদ্রপথটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক অভিবাসী রুট। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই পথটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং নিয়মিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বহু মানুষ নিরুপায় হয়ে এই পথে পা রাখে।”

আরও পড়ুন: গাজায় ৫ মাস পর প্রথম জ্বালানি ট্রাক ঢুকল, কিন্তু দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যুর মিছিল থামছে না

২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ৬০,০০০ অভিবাসী ইয়েমেনে প্রবেশ করেছেন, যেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৭,২০০। সংখ্যায় সামান্য পতন ঘটলেও, ঝুঁকি রয়ে গেছে আগের মতোই। IOM জানিয়েছে, ২০২৩ সালে এই রুটে ৫৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর গত দশকে কমপক্ষে ২,০৮২ জন নিখোঁজ হয়েছেন, যার মধ্যে ৬৯৩ জন নিশ্চিতভাবে জলে ডুবে মারা গেছেন।

ইয়েমেনে পৌঁছেও রেহাই নেই

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেনও অনেকের জন্য গন্তব্য নয়, বরং ট্রানজিট দেশ। কেউ কেউ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে নিরাপত্তার আশায় সেখানে যান, আবার অনেকে সৌদি আরব পৌঁছনোর জন্য ইয়েমেনকে ব্যবহার করেন ‘সেতু’ হিসেবে। কিন্তু ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও বিপজ্জনক। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে হুথি বিদ্রোহী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের মধ্যে হওয়া একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর সহিংসতা কিছুটা কমেছে, কিন্তু নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি এখনও সংকটজনক। IOM পূর্বে জানিয়েছে, “অনেক অভিবাসী ইয়েমেনে আটকে পড়েন। তাদের অনেকেই নির্যাতন, নিগ্রহ, বা বন্দিদশা-র শিকার হন।” সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৩৮০,০০০ অভিবাসী ও শরণার্থী বর্তমানে ইয়েমেনে রয়েছেন।

উদ্ধার প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

ঘটনাস্থলে উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে ইয়েমেনি উপকূল রক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। কিন্তু প্রবল ঢেউ, আধুনিক সরঞ্জামের অভাব ও অন্ধকারে তল্লাশি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং সমুদ্রপথে নিরাপদ অভিবাসন ব্যবস্থার দাবি তুলেছে। ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেন হয়ে উপসাগরীয় দেশগুলিতে যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত জীবনহানির ঘটনা ঘটছে। রবিবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এই বিপজ্জনক অভিবাসন রুটের নৃশংস বাস্তবতাকে ফের একবার সামনে এনে দিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজের সন্ধানে পথচলা মানুষের এই অসহায় অভিযাত্রা কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তার কোনও নিশ্চিত উত্তর এখনও নেই।