আজকাল ওয়েবডেস্ক: জগদীপ ধনখড়ের পর কে হবেন ভারতের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি? দিল্লিতে এখন এটাই সবচেয়ে বড় চর্চার বিষয়। সংসদের দুই কক্ষেই শাসকদল বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এবার কি ‘বাইরের’ কেউ পাবেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সংসদের অন্দরে। যে ‘বহিরাগত’কে নিয়ে এত গুঞ্জন তিনি কংগ্রেস সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর। একদিকে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা, অন্য দিকে শশীর মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদির তারিফ, এই অঙ্ক মিলিয়েই দুইয়ে দুইয়ে চার করছে রাজনৈতিক মহল।
যাঁকে নিয়ে এত জল্পনা তাঁকেও এদিন শুনতে হয় একই প্রশ্ন। সংসদ চত্বরে থারুরকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি পদের দাবিদার কি না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে থারুর বলেন, “এটুকু জানি যে, শাসক দল যাঁকে চাইবে তিনিই হবেন (উপ রাষ্ট্রপতি)। কারণ সংখ্যার হিসেব আমরা জানি।” তিনি আরও বলেন, “আসা করব শাসক দল বিরোধীদের সঙ্গেও কথা বলবে।”
প্রসঙ্গত, কংগ্রেসে থারুরের অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে তৈরি প্রতিনিধি দলের জন্য থারুরকে নিয়ে নির্বাচনের পর আরও বাড়ে সেই জল্পনা। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই বিদেশে যান কেরলের সাংসদ। আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে মোদির পক্ষেই কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। সব মিলিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যে থারুরের দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে তা নিয়ে সংশয় নেই রাজনৈতিক মহলে।
থারুরের সঙ্গে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বে সম্পর্কের অবনতি অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০২২ সালে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করে দল। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হবে খাড়গের নাম। কিন্তু আচমকাই প্রেসিডেন্ট পদের দাবিদার হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেন থারুর। প্রকাশ্যে থারুরের এই আচরণ ভাল ভাবে নেয়নি হাইকমান্ড।
থারুরের সাম্প্রতিক মোদি বন্দনার বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে কংগ্রেস। আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদ এবং বাগ্মী সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সংসদীয় বিতর্কে তাঁকে বক্তার তালিকায় রাখা হয়নি দলের পক্ষ থেকে। কেন তাঁকে বক্তার তালিকায় রাখেনি দল? এই প্রশ্নের উত্তরে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে থারুর একটাই শব্দ উচ্চারণ করেন, ‘মৌনব্রত’। অর্থাৎ এই বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না তিনি।
এই অবস্থায় গত ২১ জুলাই আচমকাই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হবে সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ। রাজ্যসভার ২৩৩ জন সাংসদ এবং লোকসভার ৫৪৩ সাংসদ ভোট দিতে পারবেন এই নির্বাচনে। শাসকদলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও বিরোধী ঐক্য মজবুত করতে যৌথ ভাবে একজন প্রার্থী দিতে পারে সবকটি বিরোধী দল। তবে বিরোধী ভোট একত্রিত হলেও বিজেপিকে রোখা প্রায় অসম্ভব। অন্তত কাগজে কলমে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন শাসক দলের প্রার্থী। উপরাষ্ট্রপতি পদমর্যাদার বলে, রাজ্যসভার চেয়ারম্যানও বটে। কাজেই সংসদের উচ্চকক্ষে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকেই চাইবে শাসক দল।
