নখের গোড়ায় সাদা অর্ধচাঁদ আকৃতির অংশটি কি কখনও খেয়াল করেছেন? একে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় লুনুলা অনেকের বড় আঙুলে এটি স্পষ্ট দেখা যায়, আবার কারও ক্ষেত্রে একেবারেই দেখা যায় না। অনেকেই ভাবেন অর্ধচাঁদের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কি হার্ট বা কিডনির রোগের লক্ষণ হতে পারে? কিন্তু সত্যি কি তাই? আসুন জেনে নেওয়া যাক-
চিকিৎসকরা বলছেন, নখের নিচে থাকা এই সাদা অংশটি আসলে নখের ‘ম্যাট্রিক্স’ বা উৎপত্তিস্থল। এখান থেকেই নতুন নখ গজায়। লুনুলা সাধারণত সাদা দেখায় কারণ এর নিচে রক্তনালীগুলোর ওপরের স্তর কিছুটা ঘন থাকে। কিন্তু এর রং, আকার বা দৃশ্যমানতার পরিবর্তন অনেক সময় শরীরের ভিতরের কিছু অসামঞ্জস্যের সংকেত দিতে পারে।
লুনুলা না থাকলে কী বোঝায়? যদি নখের বেসে এই সাদা অর্ধচাঁদ একেবারেই না দেখা যায়, তাহলে তা শরীরে আয়রনের ঘাটতি, রক্তাল্পতা বা কিডনির সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। কখনও আবার প্রোটিন ও ভিটামিন ঘাটতির কারণেও এটি দেখা না যেতে পারে।
রং বদলে গেলে কী হয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, লুনুলার রং পরিবর্তন হলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার। যেমন-
লালচে লুনুলা: কখনও কখনও হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নীলচে লুনুলা: শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি, এমনকি ডায়াবেটিসের ইঙ্গিতও হতে পারে।
বাদামি বা ধূসর লুনুলা: কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমার কারণে এমন হতে পারে।
নখের দাগ দেহের অভ্যন্তরের পুষ্টির ঘাটতি বা অন্য কোনও স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে। অনেকেই এসব দাগ বা রেখাকে অবহেলা করেন, ভাবেন ‘এ তো এমনিতেই চলে যাবে’। কিন্তু এই ছোট্ট পরিবর্তনটিই হতে পারে বড় কোনও সমস্যার পূর্বাভাস। ‘হাফ-অ্যান্ড-হাফ নখ’ কী? নখের নিচের অর্ধেকটা সাদা আর উপরের অর্ধেকটা বাদামি বা লালচে হয়। এটি সাধারণত কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে দেখা যায়।
তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ, শুধু লুনুলার রং বা আকার দেখে কোনও রোগ নির্ণয় করা যায় না। এটি কেবল শরীরের ভেতরের পরিবর্তনের একটি ‘সংকেত’ মাত্র। যদি অন্য উপসর্গ যেমন অতিরিক্ত ক্লান্তি, চোখ-হাত-গোড়ালি ফোলা, বুক ধড়ফড়, বা রক্তচাপের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
সাধারণ জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম আর মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখলে নখ সহ পুরও শরীরই সুস্থ থাকবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
