সারা বিশ্বে ‘ডাউন সিনড্রোম’ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলছে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত অতিরিক্ত একটি ক্রোমোজোম ২১ থাকে, যা শারীরিক-মানসিক বিকাশে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। জিনগত ত্রুটির কারণেই হয় ‘ডাউন সিনড্রোম’। শরীরের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ২১তম ক্রোমোজমে দু’টির বদলে তিনটি ক্রোমোজোম থাকে। তাই অসুখটি ‘ট্রাইজোমি-২১’ নামেও পরিচিত।  শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিজনিত কিছু সমস্যা নিয়েই জন্ম নেয় এই রোগে আক্রান্তরা।  তবে ভবিষ্যতে ডাউন সিনড্রোমের মতো জেনেটিক ডিসঅর্ডার নিয়ে হয়তো আর কোনও শিশুর জন্ম হবে না! সম্প্রতি এমনই উপায় খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। 

জাপানের মিয়ে ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এক চমকপ্রদ গবেষণার কথা জানিয়েছেন। গবেষকেরা ডাউন সিনড্রোমের সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত ক্রোমোজোম অর্থাৎ ট্রাইসোমি ২১ বাদ দেওয়ার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন। যা ভবিষ্যতে এই গুরুতর রোগকে মানুষের জীবন থেকে একেবারে গোড়া থেকে নির্মূলের পথ খুলে দিতে পারে বলে আশাবাদী গবেষকরা। 

 

আরও পড়ুনঃ কড়া ডায়েট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করেও কমবে না ওজন! সকালের এই সব অভ্যাসেই লুকিয়ে মেদ ঝরানোর সিক্রেট


বিজ্ঞানীরা সিআরআইএসপিআর-ক্যাস৯ নামে আধুনিক জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত কোষ থেকে অতিরিক্ত ক্রোমোজোম ২১ সরাতে সক্ষম হয়েছেন। এই অত্যধুনিক প্রযুক্তি হল এমন একটি বহুমুখী জিন-সম্পাদনা ব্যবস্থা যা নির্দিষ্ট ডিএনএ শনাক্ত করার জন্য একটি এনজাইমের উপর নির্ভর করে।


গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আক্রান্ত কোষ থেকে অতিরিক্ত ক্রোমোজোম বাদ দেওয়ায় সাধারণ কোষীয় আচরণ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জিন সম্পাদনার পর কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করে। কোষের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং স্ট্রেস কমে যায়। স্নায়ুর বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলো আরও সক্রিয় হয়। তাই সামগ্রিকভাবে এই গবেষণায় থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে জিন সম্পাদনার মাধ্যমে আগামি দিনে ডাউন সিনড্রোমের মূল কারণ দূর করা সম্ভব হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ মানুষের কঠিন সমস্যার সমাধান করে চ্যাটজিপিটি! একদিনের জন্য সে মানুষ হলে কী করত? উত্তর শুনলে চোখ ভিজবে আপনারও

সংশ্লিষ্ট গবেষণা নিয়ে কিছু দ্বিমতও রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব আনবে। যা অগণিত পরিবারকে নতুন আশার আলো দেখাবে। আবার কারওর মতে, ভবিষ্যতে এটি মানুষের জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘ডিজাইনার বেবি’ তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এই প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। গবেষণা এখনও ল্যাবেই সীমাবন্ধ, মানুষের ওপর পরীক্ষা হয়নি। একইসঙ্গে একপক্ষের মত, এই পরীক্ষায় কোনওভাবে সামান্য ভুলে হলে অন্য সুস্থ জিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রযুক্তিটি নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণ করতে আরও বিস্তৃত গবেষণার দরকার বলেই মত গবেষকদের একাংশের।