আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Generative AI) প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ভয়েস ক্লোনিং এখন বাস্তবতা। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডিং থেকেই কারও কণ্ঠ হুবহু নকল করে তৈরি করা যাচ্ছে “ডিপফেক ভয়েস” বা “ভয়েস ক্লোন”। টাইপ করা যেকোনো লেখা সেই কণ্ঠে বলানো সম্ভব, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চালিত ভয়েসবটের মাধ্যমে সরাসরি কথোপকথনও চালানো যাচ্ছে। কনটেন্ট নির্মাণ, গ্রাহক পরিষেবা, প্রতিবন্ধীদের সাহায্য ও ভাষা সমস্যা দূরীকরণে এর ইতিবাচক ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে।

কিন্তু প্রযুক্তির এই আশ্চর্য অগ্রগতি সাথেই নিয়ে এসেছে গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি। প্রতারক ও অপরাধীরা এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে ব্যক্তিগত ও আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অডিও নমুনা ব্যবহার করে, অপরাধীরা কাউকে ফোন করে বা মেসেজ পাঠিয়ে এমন কণ্ঠে কথা বলছে, যা শুনে সহজেই বিশ্বাস করা যায় যে এটি কোনো পরিচিত বা বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির কণ্ঠ।

বিপদের ধরনগুলি কী কী?

মিথ্যা প্রচার ও গুজব ছড়ানো: রাজনৈতিক নেতা বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মুখে ভূয়া বক্তব্য বসিয়ে জনমত প্রভাবিত করা সম্ভব। 

মানহানিকর কনটেন্ট: কারও কণ্ঠে অশালীন বা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ছড়িয়ে সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করা হতে পারে। ভয়েস পারফর্মারদের পেশা হুমকির মুখে: অভিনেতা, শিল্পী ও ভয়েসওভার পেশাজীবীরা কণ্ঠ চুরি ও পরিবর্তনের মাধ্যমে পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

বিশিং ও প্রতারণা: ভয়েস ক্লোন ব্যবহার করে ফোন করে ব্যাঙ্ক একাউন্ট তথ্য, ওটিপি, ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

জিম্মি নাটক: পরিবারের সদস্যদের কণ্ঠ নকল করে ‘ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে’ এমন ফেক ফোন কল দিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে।

বায়োমেট্রিক প্রতারণা: ভয়েসভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এখন ঝুঁকির মুখে, কারণ ভয়েস ক্লোনিং দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হ্যাক করা সম্ভব হচ্ছে।

আরও পড়ুন: স্ত্রীর 'চাহিদা' তুঙ্গে! 'অতৃপ্ত' বউকে সুখি করতে যা করলেন স্বামী, শুনলে ঘাম ছুটবে


কীভাবে ঠেকানো সম্ভব এই ভয়েস ক্লোন প্রতারণা?

প্রতিরোধ গড়ার জন্য এখনই দরকার ভয়েস ক্লোন শনাক্তকারী শক্তিশালী অ্যালগরিদম। যেভাবে AI দিয়ে ভয়েস ক্লোন বানানো হয়, সেভাবেই AI ব্যবহার করে শনাক্ত করাও সম্ভব। ‘রিপ্লে অ্যাটাক’ শনাক্তের পাশাপাশি ‘হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ভিত্তিক ক্লোন অ্যাটাক’ শনাক্তে বিশেষভাবে তৈরি মেশিন লার্নিং পদ্ধতি আজকের সময়ের দাবি।

ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি যেমন ভবিষ্যতের দরজা খুলছে, তেমনই খুলছে জালিয়াতি ও অপরাধের নতুন পথ। তাই এই প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথেই এর অপব্যবহার ঠেকাতে আইনি কাঠামো, নৈতিক দিশা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। সতর্কতা, উদ্ভাবন ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের মধ্য দিয়েই প্রযুক্তির আসল সম্ভাবনা সামনে আনা সম্ভব হবে।

ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি যেমন ভবিষ্যতের দরজা খুলছে, তেমনই খুলছে জালিয়াতি ও অপরাধের নতুন পথ। তাই এই প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথেই এর অপব্যবহার ঠেকাতে আইনি কাঠামো, নৈতিক দিশা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। সতর্কতা, উদ্ভাবন ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের মধ্য দিয়েই প্রযুক্তির আসল সম্ভাবনা সামনে আনা সম্ভব হবে।

সরকারি ও বেসরকারি স্তরে এ নিয়ে গবেষণা, নীতি প্রণয়ন ও নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলিকে দ্রুততর ফ্যাক্টচেক ও অডিও যাচাই ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। স্কুল-কলেজ স্তরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই প্রযুক্তির ভালো-মন্দ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিকত্বই পারে ভয়েস ক্লোনিংয়ের অন্ধকার দিককে রুখে দিয়ে এর সম্ভাবনার আলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে।