মোহনবাগান - ০

আহাল এফকে - ১ (আন্নায়েভ)

সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: সবে মাত্র ম্যাচ শেষের বাঁশি বেজেছে। তারমধ্যেই গ্যালারিতে উঠল 'গো ব্যাক মোলিনা' ধ্বনি। ঘরের মাঠে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টুয়ের শুরুতেই হোঁচট খেল মোহনবাগান। মঙ্গলবার যুবভারতীতে প্রায় ৩৫ হাজার সমর্থকের সামনে আহাল‌ এফকের কাছে ০-১ গোলে হার ভারতসেরাদের।‌ এশিয়া সেরার লড়াইয়ের শুরুতে নিজেদের ডেরায় বিদেশিহীন তুর্কমেনিস্তান দলের বিরুদ্ধে জঘন্য ফুটবল। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের পতন। বিদেশিহীন আহালের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই বিদেশি সংখ্যা বাড়াতে পারতেন মোলিনা। সংখ্যায় কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু তিনজনকে রেখে শুরু করেন। ডার্বি হেরে ডুরান্ড কাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর গত ছয় সপ্তাহ ধরে এএফসির জন্য প্রস্তুতি নেন মোলিনা। মাঝে হয় একাধিক রুদ্ধদ্বার প্র্যাকটিস। তারওপর এএফসির প্রস্তুতির জন্য জাতীয় শিবিরে ফুটবলার ছাড়েনি মোহনবাগান। তার এই পরিণাম! ঘরের মাঠে এত নেতিবাচক ফুটবল মানা যায় না। ফিফা ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের নীচে থাকা দলের বিরুদ্ধে সাহসী ফুটবল খেলাতে পারেনি মোলিনা। তিন বিদেশি অ্যাটাকার জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রি পেত্রাতোস, রবসন রবিনহোকে বেঞ্চে রাখেন। 

তুর্কমেনিস্তানের দলে কোনও বিদেশি নেই। সেই ফায়দা তুলতে পারতেন মোলিনা। হাতে ছ'জন বিদেশি থাকা সত্ত্বেও প্রথম একাদশে মাত্র তিনজন বিদেশিকে নিয়ে কেন শুরু করলেন বোধগম্য নয়। রক্ষণে টম অলড্রেড এবং অ্যালবার্তো রডরিগেজ।‌ সামনে জেসন কামিন্স। সামনে একা অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বকাপারকে রাখেন বাগান কোচ। ঘরের মাঠে প্রায় ৩৫ হাজার সমর্থকের সামনে খেলা। কিন্তু মোহনবাগানের আক্রমণে সেই ঝাঁঝ ছিল না। প্রথমে কিছুটা খোলসের মধ্যে ছিল সবুজ মেরুন ফুটবলাররা। শুরুতে আহালকে মেপে নিয়ে আক্রমণে যাওয়ার ট্যাকটিক্স নেন ভারতসেরা দলের কোচ। কিন্তু সেই অর্থে প্রথমার্ধে গোলের কোনও পজিটিভ সুযোগ নেই। বার দুয়েক বাঁ প্রান্ত থেকে বক্সের মধ্যে প্রবেশ করেন লিস্টন‌ এবং আপুইয়া‌।‌ কিন্তু কামিন্স পর্যন্ত বল পৌঁছয়নি। 

এদিন উইং প্লেও তেমন কার্যকরী ছিল না। মনবীরের জায়গায় ডান প্রান্তে খেলেন কিয়ান। অন্যদিকে লিস্টনকে বোতলবন্দি করে ফেলে আহালের রক্ষণ। বাগান মিডিওর সঙ্গে ডাক টিকিটের মতো সেঁটে থাকেন বাসিমভ। যার ফলে খেলা তৈরি করার জন্য ফাঁকা জমি পায়নি লিস্টন। প্রথমার্ধে গোলের হাফ চান্স পেয়েছিলেন কামিন্স। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি বিশ্বকাপার। ডুরান্ড ডার্বিতে হারের পর কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেনি মোহনবাগান। ছয় সপ্তাহ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রস্তুতি সারেন মোলিনা।‌ একমাত্র গত সপ্তাহে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে। আরও বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা উচিত ছিল মোহনবাগানের। তাই শুরুতে তালমিলের অভাব ছিল। মাঝমাঠে বেশ কিছু মিস পাস হয়। অন্যদিকে আহালের ফুটবলাররা ম্যাচের মধ্যে ছিল। প্রথমার্ধে আহালের একমাত্র সুযোগ ৩২ মিনিটে। বাসিমভের পাস থেকে বেরেনভের শট পোস্টে লাগে। 

বিরতির পর ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করে মোলিনার দল। মিনিট দশেকের একটা ঝড়। অন্তত তিনটে গোলের সুযোগ। প্রথম মিস কামিন্সের। তারপর ৬৮ মিনিটে সিটার নষ্ট। ফাঁকা গোলের সামনে দাঁড়িয়ে ম্যাকলারেনের উদ্দেশে বল বাড়ান কামিন্স। বরং, এই পজিশন থেকে নিজে শট নিলে গোলের সুযোগ বাড়ত‌।‌ বিরতির পর ম্যাকলারেন এবং অনিরুদ্ধ থাপাকে নামান মোলিনা। তারপর ম্যাচের গতি কিছুটা বাড়ে। নেমেই প্রথম টাচে একের বিরুদ্ধে একে বিপক্ষের গোলকিপারের গায়ে মারেন জেমি। তবে তাঁর আগেই রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজিয়ে দেয়। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল আহাল। বেরেনভের শট বাঁচান বিশাল কাইথ। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে রবসনকে নামান মোলিনা। গোলের ঠিকানা লেখা একটি পাস বাড়ান ব্রাজিলীয়। কিন্তু ৮১ মিনিটে রবসনের পাস থেকে বাইরে মারেন সাহাল। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে গোলসূচক গোল আহালের।‌ বাসিমের পাস থেকে গোল করেন আন্নায়েভ এনভের। অভিষেককে তুলে শুভাশিসকে নামানো বড় ভুল। চোট থেকে ফিরে এদিন একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। মোহনবাগানের পরের ম্যাচ সেপাহান এসসির বিরুদ্ধে।