আজকাল ওয়েবডেস্ক: নারীচেহারা কেমন হয়? স্বচক্ষে দেখেননি কোনও দিন। আমৃত্যু এমনই জীবন কাটিয়েছেন এক ব্যক্তি। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। এক-দু বছর নয়, দীর্ঘ ৮২ বছর নারীর মুখ না দেখেই কাটিয়েছিলেন তিনি। নাম মিহাইলো টোলোতোস। এই সন্ন্যাসীর জন্ম উনিশ শতকের মাঝামাঝি। মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩৮ সালে। তাঁর এহেন আশ্চর্য জীবনের নেপথ্যে রয়েছে গ্রীসের এক বিশেষ ধর্মীয় প্রথা।
মিহাইলো টোলোতোসের জন্ম আনুমানিক ১৮৫৬ সালে। জন্মের কিছুক্ষণ পরেই তাঁর মা মারা যান। পরিবার বলতে আর কেউ ছিলেন না। এতটুকু শিশুকে আশ্রয় দেন মাউন্ট আথোস নামের একটি পাহাড় অবস্থিত গ্রিক অর্থডক্স বা সনাতনপন্থী মঠের সন্ন্যাসীরা। সেই শুরু, তারপর আর কখনও সেই মঠের বাইরে পা রাখেননি তিনি।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
স্থানীয় জনগণ গ্রীসের মাউন্ট আথোসকে এক অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে গণ্য করে। কথিত আছে, ১০৬০ সাল থেকেই এই মঠে নারীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু মানুষের জন্য নয়, স্ত্রী-প্রজাতির কোনও গৃহপালিত বা বন্যপ্রাণীও প্রবেশ করতে পারে না এই এলাকায়। সেই কারণে মিহাইলো কোনও দিন নারীর মুখ দেখার সুযোগই পাননি। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সেই মঠের মধ্যেই। না ছিল বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ, না ছিল আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। গাড়ি, প্লেন, টেলিভিশন, এসব কিছুর কোনও অস্তিত্বই যেন ছিল না তাঁর জীবনে। তাঁর জীবন নিয়মিত প্রার্থনা করা, ধ্যান করা এবং কঠোর সন্ন্যাস ব্রতের অনুশীলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
১৯৩৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর মঠের অন্যান্য সন্ন্যাসীরা তাঁর প্রতি বিশেষ সম্মান জানিয়ে এক অভূতপূর্ব অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, টোলোতোস পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞানত কখনও কোনও নারীকে দর্শন করেননি।
এই ঘটনা আজকের আধুনিক দুনিয়ায় একেবারেই অকল্পনীয়। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এমন জীবনধারা ভাবাই কঠিন। যেখানে চারপাশে প্রযুক্তি, সামাজিক সম্পর্ক এবং সর্বোপরি মানবিক সংযোগই জীবনের মূল স্তম্ভ, সেখানে টোলোতোসের নিঃসঙ্গ, সংযমপূর্ণ জীবন যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক অদ্ভুত বিস্ময়। তবে বিষয়টিকে যেমন কেউ কেউ সংযমের উদাহরণ হিসেবে গণ্য করেন, তেমনই অনেকেই বিষয়টির সমালোচনাও করেন। দ্বিতীয়পক্ষের মতে, তাঁর জন্ম একজন নারীই দিয়েছেন। নারী মানব সভ্যতার অর্ধাংশ। তাঁদের দেখলে কীভাবে সন্ন্যাস ভঙ্গ হতে পারে? তবে কি ধর্মকর্মে নারীরা জায়গা পাবেন না?
সবমিলিয়ে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ধর্মীয় অনুশাসনের কঠোরতা ধরা পড়ে, অন্যদিকে তেমনই প্রশ্ন ওঠে, মানুষ কি প্রকৃত অর্থে সমাজ ছাড়া, সম্পর্ক ছাড়া, আলাদা হয়ে বাঁচতে পারে? মিহাইলো টোলোতোস হয়তো পেরেছিলেন, কিন্তু তাঁর জীবন এক ব্যতিক্রম, এক নিঃসঙ্গ অধ্যায়। তাঁর সিদ্ধান্ত একেবারেই ব্যক্তিগত ছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের পোস্টমর্টেম আজও অব্যাহত।
