মিল্টন সেন, হুগলি, ২৭ জুলাই: হিমঘরে পর্যাপ্ত আলু জমে রয়েছে। আলু নাকি বেরোচ্ছে না। বাজারে আলুর দাম তলানিতে নামবে। সম্প্রতি আলু ব্যবসায়ী এবং স্টোর মালিকদের একাংশের দেওয়া এই বিবৃতি জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তবে কার্যত হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটাই। কারণ, দেখা যাচ্ছে এখনও অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যের খুচরো বাজারে আলুর দাম অনেকটাই বেশি। 

সরকারি তথ্য অনুযায়ী আলুর দাম উত্তরপ্রদেশে ২০.৬৮ টাকা কেজি, পাঞ্জাবে ১৮.৯৩ টাকা, ওড়িশায় ২০.৪৩ টাকা, বিহারে ২০.০৩ টাকা কেজি। বাংলায় আলু বিপণন মূলত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপ চাষের বন্ড থেকে আলু রেডি করে স্টোর গেট থেকে পাইকারি বাজারের জন্য লোড করা। বন্ডের দাম অনুযায়ী কৃষক পায় কেজি প্রতি ৬ টাকা থেকে ৬.৫০ টাকা। ওই আলু রেডি করে স্টোর গেটে গাড়ি লোড করতে খরচ পড়ে প্রতি কেজি ৫ টাকা। এই খরচের মধ্যে হিমঘর ভাড়া সঠিক মাঝারি আলুর দামের পার্থক্য এবং লেবার ও সর্টেজ, ড্রাইং খরচ ধরা থাকে। ফলে হিমঘরের গেটে আলুর দাম হয় ১১ থেকে ১২ টাকা কেজি।

 দ্বিতীয় ধাপে ওই আলু কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছতে এক টাকা গাড়ি ভাড়া লাগে। সঙ্গে ৫০ পয়সা পাইকারি আড়তদারের খরচ ধরলে পাইকারি বাজারে আলুর দাম হয়  ১২.৫০ টাকা। তৃতীয় ধাপে পাইকারি আড়ত দারের কাছ থেকে খুচরো ব্যবসায়ীরা আলু কিনে নিয়ে যায়। তার ভ্যান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ৫০ পয়সা অতিরিক্ত খরচ হয়। অর্থাৎ চাষীর কাছ থেকে সরাসরি খুচরো বিক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছতে আলুর দাম হয়ে যায় ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি। স্বাভাবিক ভাবেই সমস্ত খরচ ধরলে ক্রেতার কাছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি আলু বিক্রি হয় উচিত। কিন্তু বিক্রি হয় বেশি দামে।

এই প্রসঙ্গে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেছেন, অসত্য তথ্য বাজারে প্রচার করে কিছু সরকারি সুবিধে আদায়ের চেষ্টা করছে ব্যবসায়ী ও হিম ঘর মালিকের একাংশ। বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কিছুই হয়নি। সবই নিয়ম মাফিক চলছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি বছরে রাজ্যের ৫১৯ টি হিমঘরে ৭০.৮৫ লক্ষ মেট্রিকটন আলু সংরক্ষিত হয়। এখনও পর্যন্ত সংরক্ষিত আলুর ৩০ শতাংশ বেরিয়ে গেছে। আলু তোলার সময় রাজ্য সরকার হিমঘরের গেটে নূন্যতম ক্রয় মূল্য ৯ টাকা নির্ধারণ করে। বাজারে সেই ঘোষণার সদর্থক  প্রভাব পড়ে। 

বর্তমানে প্রত্যেক সপ্তাহে ১.৯০ থেকে ২ লক্ষ মেট্রিকটন আলু হিমঘর থেকে বেরোচ্ছে। গত বছর যে পরিমাণ আলু হিমঘর থেকে বেরিয়েছিল এ বছর ঠিক সেই সমতা রেখেই আলু হিমঘর থেকে বাজারে আসছে। একইসঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলু রাজ্য থেকে বাইরের রাজ্যে যাচ্ছে। রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বাজারে যথা কলকাতায় কেজিপ্রতি জ্যোতি আলু কুড়ি টাকা এবং জেলায় ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকায় আলু পাওয়া যাচ্ছে। 

মন্ত্রীর অভিযোগ, একশ্রেণীর হিমঘর মালিক এবং আলু ব্যবসায়ী চালাকি করে আলু সংরক্ষণকারীদের ফ্রি বন্ডের দাম কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এবং তাদের এই প্রচেষ্টার যুক্তি হিসেবে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করছে। রাজ্য সরকারের তরফে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে বিভাগীয় আধিকারিক প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের তরফে সকলকে সতর্ক থাকতে অনুরোধও করা হয়েছে। মিড-ডে মিল,আই সি ডি এস সেন্টার, হাসপাতাল, সহ বিভিন্ন বাজারে, সুফল বাংলা, বিশেষ বিক্রয় কেন্দ্র খুলে আলু বিক্রি করছে। 

আরও পড়ুনঃ গোপনে কলেজ ল্যাবরেটরিতে ছাত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ফাঁস! অধ্যাপকের ভিডিও ভাইরালে রাজ্যজুড়ে শোরগোল

রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে। বেচারাম মান্না আরও বলেছেন, প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে জনৈক হিমঘর মালিক, তিনি অভিযোগ করেছেন যে গত বছর তাঁর হিমঘরে আলু থেকে গিয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী, দেখা যাচ্ছে তাঁর হুগলির তিনটি স্টোর থেকে ডিসেম্বর মাসেই সব আলু বেরিয়ে গিয়েছিল। এই বছর ওই তিনটি হিমঘর থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত, ৩৭ শতাংশ, ৩৩ শতাংশ এবং ২৩ শতাংশ আলু ইতিমধ্যেই বেরিয়ে গিয়েছে। এই তথ্য লুকোনোর কোনও অবকাশ নেই, কারণ এই হিমঘর সংক্রান্ত তথ্য প্রতিটি হিমঘর কে অনলাইনে দাখিল করতে হয়। সাপ্তাহিক খতিয়ান প্রতিটি হিমঘরের সকলের অবগতির জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আছে। ওই তথ্য ভুল, সকলেই তা দেখতে পারেন। ওরা এটা করে রাজ্যের থেকে কৌশলে পরিবহন ভর্তুকি বা হিমঘর ভর্তুকি আদায় করার চেষ্টা করছে। যেটা কার্যত সম্ভব হবে না।