আজকাল ওয়েবডেস্ক: সময়ের অর্থ একেক জনের কাছে এক এক রকম। মহাভারতে সময় নিজেই একটি চরিত্র। তেমনই কারও কাছে সময় মানে ধৈর্যের পরীক্ষা। আবার কারও কাছে হাতে সময় থাকা মানে কিছুটা আলসেমি করে কাটানো। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সব পৌঁছতে দেরি করে ফেলেন। প্রতিবারই বলেন, “আর পাঁচ মিনিট, পৌঁছচ্ছি”? এভাবে কখনোও মিটিংয়ে ঢুকতে দেরি হয়ে যায়, কখনও বাস, ট্রেন বা উবর মিস হয়ে যায়। অনেকেই বিষয়টিকে অবহেলা বা অপদার্থতার লক্ষণ মনে করলেও আধুনিক মনোবিজ্ঞান কিন্তু অন্য কথা বলছে। এই ধরনের মানুষরা আসলে ‘টিডসঅপটিমিস্ট’।
এই বিষয়টি ঠিক কী? শব্দটি এসেছে সুইডিশ ভাষা থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ “সময় সম্পর্কে অতিরিক্ত আশাবাদী”। মানে, এই ব্যক্তিরা ভাবেন যে, তিনি আরও কিছু কাজ করে, আরও একটু দেরি করে বেরলেও ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন! বাস্তবে কী হয়? সবসময়েই একটু দেরিতেই পৌঁছন, আর সেটা তাঁর অজান্তেই একটা প্রবল অস্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করে।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
টিডসঅপটিমিস্ট মানেই অলস বা দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়
এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম নয়। মজার কথা হল, এঁরা সাধারণত কর্মঠ, সক্রিয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মেধাবীও। কিন্তু তাঁদের একটাই সমস্যা সময় মাপতে ভুল করা। তাঁরা মনে করেন ৩০ মিনিটের মধ্যে তাঁরা স্নান করা, জলখাবার খাওয়া, পোশাক পরা- সবকিছুই সেরে ফেলতে পারবেন। অথচ বাস্তবে লাগে অন্তত এক ঘণ্টা। ফলত, সব কিছুতেই থাকে হুড়োহুড়ি, স্ট্রেস আর... দেরি।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
এই মানসিকতার নেপথ্যে থাকে মস্তিষ্কের কিছু খেলাও
মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, এই ধরনের মানুষদের ব্রেনে সময়ের হিসেব করার যে ‘ইন্টারনাল ক্লক’ থাকে, সেটি একটু আলাদা ভাবে কাজ করে। তাঁরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকেও শিক্ষা নেন না। এছাড়া, যে কাজ তাঁদের উত্তেজিত করে বা আনন্দ দেয়, সেই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা সময়ের হিসেব পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ মগজের ঘড়িতেই গোলমাল।
কার্যক্ষেত্রে এবং সম্পর্কেও পড়ে প্রভাব
একজন টিডসঅপটিমিস্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়। অফিসে মিটিংয়ে দেরি, ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে দেরি, এমনকি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার সময়ও যদি বারবার দেরি হতে থাকে, তাহলে সেটি একটা নেতিবাচক ইমপ্রেশন তৈরি করে। অনেকেই একে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কিংবা ‘অপরকে গুরুত্ব না দেওয়ার’ প্রতীক হিসেবে দেখে থাকেন।
কীভাবে নিজেকে এই অভ্যাস থেকে মুক্ত করা যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের প্রতিদিনকার রুটিনে সব কাজের জন্য কিছু ‘বাফার টাইম’ রাখা খুবই জরুরি। অর্থাৎ যদি মনে করেন ২০ মিনিটে অফিস পৌঁছে যাবেন, তাহলে নিজেকে ৩০ মিনিট সময় দিন। তাছাড়া, ঘড়ির সময় ১০ মিনিট এগিয়ে রাখা, মোবাইলে একাধিক অ্যালার্ম সেট করা বা কাজ শুরুর আগে ছোট্ট একটা ‘টাইম চেক’ করাও বেশ কার্যকর পদ্ধতি।
সব মিলিয়ে বিষয়টি শুনতে যতটা সহজ বা তুচ্ছ, বাস্তবে কিন্তু তা নয়। বরং এই সমস্যা নানারকম জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই যদি আপনি টিডসঅপটিমিস্ট হন, তাহলে সচেতন ভাবে এই সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করা জরুরি।
