গরম ভাতে এক চামচ ঘি, আলু সেদ্ধ আর কাঁচা লঙ্কা। সাদামাটা এই মেনু জিভে জল এনে দেয় কম-বেশি সব বাঙালির। ডাল বা পোলাও হোক কিংবা নিরামিষ রান্না, কয়েক গুণ স্বাদ বদলে দিতে পারে ঘি। এককথায় ঘি আমাদের রান্নাঘরের অতি পরিচিত একটি খাবার, যা বহু বছর ধরে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত। স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন খনিজ, ভিটামিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘি-তে পাওয়া যায়। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিডও রয়েছে। আয়ুর্বেদে ঘি খাওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু যতই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হোক, রোজ ঘি খাওয়া কি আদৌ ভাল? নাকি প্রতিদিন অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার অভ্যাস স্বাস্থ্যের বিপদের কারণ হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক বেশি ঘি খেলে কী হতে পারে-
* ওজন বৃদ্ধি- ঘি-তে রয়েছে প্রচুর ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এটি অতিরিক্ত খেলে শরীরে ফ্যাট জমে ওজন বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই বাড়তি মেদের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
২. হার্টের সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা: প্রতিদিন ঘি খাওয়া শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল)-এর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ঘি-এর কারণে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
৩. হজমের সমস্যা: ঘি অনেকের পক্ষে হজম করা কঠিন। তাই নিয়মিত বেশি খেলে গ্যাস, অম্বল বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
৪. লিভারের উপর চাপ: যাদের লিভার দুর্বল বা আগে থেকে লিভারজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁদের জন্য বেশি ঘি খাওয়া ক্ষতিকর। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে।
৫. দুগ্ধজাত খাবার সহ্য না হলে বিপদ: যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে, তাঁদের বেশি ঘি হলে সমস্যা হতে পারে। এতে চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি বা হজমে গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে
কারা ঘি খাওয়া এড়িয়ে চলবেন
* হার্টের রোগী কিংবা যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাঁদের ঘি খাওয়ার প্রতি সচেতন হতে হবে।
* উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলেও বুঝেশুনে ঘি খেতে হবে।
* যাদের স্থূলতা বা ওজনজনিত সমস্যা যাদের রয়েছে অর্থাৎ যারা বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলতে চাইছেন তাদের ঘি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
* লিভার বা পিত্তথলির সমস্যা থাকলেও ঘি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।
* দুধ কিংবা দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি সংবেদনশীল বেশি ঘি খাবেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘি একেবারে যে খারাপ তেমনটা নয়। বরং অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে ঘি খাওয়া জরুরি। যেমন দিনে ১ চা চামচ ঘি খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। এতে উপস্থিত থাকে ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হজমে সহায়ক এবং ত্বক-চুল ভাল রাখে। সেক্ষেত্রে শরীরে যদি আগে থেকে কোনও দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্রতিদিন ঘি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত নয়।
