বিভাস ভট্টাচার্য: কত জোরে এসেছিল গুলিটা? এসেছিল কোন্ পথে? নির্ভুল মাপের জন্য এবার 'ব্যালিস্টিক ভেলোসিটি মেজারমেন্ট সিস্টেমস' আনতে চলেছে স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি বা এসএফএসএল। এতদিন এই মাপের জন্য ব্যবহার করা হত এই সংক্রান্ত একটি 'স্ট্যান্ডার্ড রুল'। এই যন্ত্র ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আরও অত্যাধুনিক হয়ে উঠবে এসএফএসএল। 

রাজ্য পুলিশের এডিজি এবং এসএফএসএল-এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কে জয়রামন জানিয়েছেন, কলকাতা, জলপাইগুড়ি ও দুর্গাপুরের ল্যাবরেটরিতে আপাতত এই ব্যালিস্টিক ভেলোসিটি মেজারমেন্ট সিস্টেমস বসানো হবে। 

খুন বা অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে ফরেন্সিক সায়েন্সের গুরুত্ব অপরিসীম। ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নানা নমুনা সংগ্রহ এবং সেগুলির চুলচেরা বিশ্লেষণ একদিকে যেমন তদন্তকারী সংস্থাকে অপরাধের তত্ত্ব তালাশ করতে সহায়তা করে পাশাপাশি এসএফএসএল যে প্রমাণগুলি সামনে নিয়ে আসে সেগুলিই আদালতে পুলিশ পেশ করে। বর্তমানে রাজ্য সরকার নতুন করে এই বিভাগটি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেই হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে এই বিভাগটির বিভিন্ন আঞ্চলিক দপ্তর। তার ফলে একদিকে যেমন বাড়বে কর্মী সংখ্যা তেমনি কাজেও আসবে আরও গতি। 

আরও পড়ুন: লাইকের লোভে এত বড় ঝুঁকি! শাড়ি পরে গাছের মগডালে তরুণী, ভিডিও দেখে হেসে লুটোপুটি নেটিজেনরা

জানা গিয়েছে আপাতত নতুন পাঁচটি আঞ্চলিক ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য। যেগুলি তৈরি হবে হুগলির (গ্রামীণ) সিঙ্গুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর, নদীয়া জেলার কল্যাণী, উত্তর ২৪ পরগণার ব্যারাকপুর এবং মুর্শিদাবাদে। এবিষয়ে দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ল্যাবরেটরিগুলি যখন পূর্ণ গতিতে কাজ শুরু করবে তখন বর্তমানে যে ল্যাবরেটরিগুলি আছে তার উপর চাপ কম হবে। কারণ, একটা অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় এসএফএসএল রিপোর্ট দিতে দেরি করে।‌ অথচ কাজের চাপের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কর্মীদের অনুপাতের অনেকটাই তফাৎ। যে কারণেই চাপটা বেশি থাকে বলেই কখনও কখনও রিপোর্ট দিতে দেরি হয়।

একদিকে যেমন নতুন আরও আঞ্চলিক ল্যাবরেটরি গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তেমনি ৩২টি নতুন মোবাইল ফরেন্সিক ভ্যান রাস্তায় নামানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কে জয়রামন। যেগুলি জেলায় কাজে লাগানো হবে। এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গে প্রয়োজনমতো কলকাতা অথবা দুর্গাপুর থেকে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির আধিকারিক ও কর্মীরা যান। কিন্তু জেলায় এই সুবিধা চালু হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ নিজেরাই তাদের প্রয়োজনমতো সেগুলি কাজে লাগাতে পারবে। 

উল্লেখ্য, কলকাতার এই ল্যাবরেটরিটি হল দেশের প্রথম ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি। ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে যার যাত্রা শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ল্যাবরেটরিতে যুক্ত হয়েছে নানা আধুনিক পদ্ধতি। খুন বা অন্যান্য অপরাধ ছাড়াও এই ল্যাবরেটরিতে করা হয় ভয়েস স্যাম্পল টেষ্ট বা গলার স্বরের পরীক্ষা। বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা এই ল্যাবরেটরির সঙ্গে যুক্ত। ল্যাবরেটরির সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাধারণত এই ধরনের ল্যাবরেটরির কাজ হল পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থাকে অপরাধের দিক নির্দেশের ক্ষেত্রে সহায়তা করা। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কাউকে যদি বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় তবে সেই ব্যক্তির 'ভিসেরা' পরীক্ষার মাধ্যমে বলে দেওয়া হয় কী ধরনের বিষ বা অন্য কিছু ওই ব্যক্তির ভিসেরাতে ছিল কি ছিল না। আবার অনেক সময় ফোনে যদি কেউ কোনো অপরাধের নির্দেশ দেয় এবং তার রেকর্ডিং যদি পাওয়া যায় তবে ফরেন্সিক টেষ্টের মাধ্যমে বলে দেওয়া সম্ভব গলার আওয়াজ ধৃত ব্যক্তির কিনা। যেহেতু এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক তাই পুলিশের পক্ষেও সুবিধা হয় ল্যাবরেটরির রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে।