আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু ওইসি (অবজারভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি) অনুযায়ী, মরুভূমিতে ভরা সৌদি আরব অস্ট্রেলিয়া, চিন এবং বেলজিয়ামের মতো অন্যান্য দেশ থেকে বালি আমদানি করে। তাও আবার নির্মাণকাজের জন্য। এই তথ্য যদিও প্রথমে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। এর নেপথ্যে একটি ভাল কারণ রয়েছে, বিশেষ করে যখন দেশটি তাঁর ‘ভিশন ২০৩০’ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

সৌদি আরব কেন নিজস্ব মরুভূমির বালি ব্যবহার করতে পারে না?

যদিও মরুভূমিতে বালি থাকে, তবুও তা নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, মরুভূমিতে পাওয়া বালি হাজার হাজার বছর ধরে বাতাসের দ্বারা ক্ষয়ের ফলে নির্দিষ্ট আকৃতি পেয়েছে। যার ফলে কণাগুলিকে খুব মসৃণ এবং গোলাকার হয়। এই ধরণের বালি কংক্রিট তৈরির জন্য ভালভাবে কাজ করে না, কারণ সিমেন্ট এবং জলের সঙ্গে সঠিকভাবে মিশ্রিত হয় না।

বিশেষ করে শক্তিশালী ভবন, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য বড় প্রকল্প নির্মাণের জন্য রুক্ষ এবং কৌণিক বালির দানা প্রয়োজন। এই ধরণের বালি মরুভূমিতে নয়, নদীগর্ভে, হ্রদে এবং সমুদ্রের তলদেশে পাওয়া যায়। ধারালো দানাগুলি একসঙ্গে আরও ভালভাবে লেগে থাকে এবং কংক্রিটকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

আরও পড়ুন: শুধুই স্বাস্থ্য না অন্য কিছু? উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের ইস্তফার পরেই সামনে আসছে অনেক তত্ত্ব

বিশ্বজুড়ে আরও বড় সমস্যা

সৌদি আরবের এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী আরও একটি বৃহত্তর সমস্যা তুলে ধরেছে। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সঠিক ধরণের বালির ঘাটতি। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) বলছে যে গোটা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন টন বালি ব্যবহার করা হয়। যা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কঠিন পদার্থের একটি। কিন্তু সেই বালির খুব সামান্য অংশই আসলে নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। তাই সৌদি আরবের মতো মরুভূমির দেশেও, নির্মাতাদের প্রায়শই তাদের চাহিদা মেটাতে সঠিক ধরণের বালি পেতে দেশের বাইরে তাকাতে হয়।

সৌদি আরবে বালি সরবরাহে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকা

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উচ্চমানের নির্মাণ এবং সিলিকা বালি সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে। OEC অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া প্রায় ২৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বালি রপ্তানি করেছিল। যা ১৮৩টি দেশের মধ্যে এটিকে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় বৃহত্তম বালি রপ্তানিকারক করে তুলেছিল। এই বালি আমদানি করা দেশগুলির মধ্যে সৌদি আরব অন্যতম। এক বছরে সৌদি আরব অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক নির্মাণ-গ্রেড বালি কিনেছিল।

২০২৪ সালে বালির বিষয়টি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের দৃষ্টি  আকর্ষণ করেছিল। বিশেষ করে যখন সৌদি NEOM, The Red Sea Project এবং Kiddiya এর মতো বিশাল প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

বিশ্বে নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বালির অভাব ক্রমশ বাড়ছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) সতর্ক করে দিয়েছে যে গ্রহটি ‘বালি সঙ্কটের’ মুখোমুখি হচ্ছে। এই সমস্যাটি অনিয়ন্ত্রিত বালি উত্তোলনের ফলে উদ্ভূত, যার ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলি ক্ষয় হচ্ছে, প্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে এবং অনেক প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র তাদের জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য, কিছু দেশ অন্যান্য বিকল্পের দিকে নজর দিচ্ছে। যেমন, এম-স্যান্ড (তৈরি বালি), পাথরগুলিকে সূক্ষ্ম কণায় ভেঙে তৈরি করা হয় যা নির্মাণের জন্য ভাল কাজ করে। এছাড়াও, পুনর্ব্যবহৃত নির্মাণ বর্জ্যের ব্যবহার। নতুন বালির প্রয়োজনীয়তা কমাতে নির্মাণ সামগ্রী পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে।