আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিন সবসময় এমন কিছু করে যা সত্যিই অবাক করে। সম্প্রতি, একটি বৃহৎ চিনা পণ্যবাহী জাহাজ ঝেন হুয়া ২৯ প্রায় ১৯,৭০০ নটিক্যাল মাইল ভ্রমণ করেছে। ঝেন হুয়া ২৯ নামের জাহাজটি ২০ জুন সাংহাই থেকে রওনা হয় এবং ভারত মহাসাগর অতিক্রম করার আগে দক্ষিণ চিন সাগরের মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে যাত্রা করে। একটি ৮০০ ফুট দীর্ঘ পণ্যবাহী জাহাজটি মাত্র পাঁচটি বিশাল জাহাজ থেকে তীরে পণ্য ওঠানামার ক্রেন সরবরাহ করার জন্য এই বিশাল পথ পাড়ি দিয়েছে।

সমুদ্রে তিন মাসেরও বেশি সময় কাটিয়ে এবং তিনটি মহাসাগর পাড়ি দিয়ে জাহাজটি অক্টোবরে জ্যামাইকার কিংস্টন বন্দরে নোঙর করে। জাহাজটিতে বহন করা ক্রেনগুলি চিনে তৈরি এবং সেগুলি জামাইকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় উপকূলের বন্দরগুলিতে ব্যবহৃত হবে।

কয়েক দশক ধরে এই ধরনের দীর্ঘ ভ্রমণ বিশ্ব বাণিজ্যের একটি নিয়মিত অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ভারী যন্ত্রপাতি বিশ্বের এক অংশে তৈরি করা হয় এবং মহাদেশ জুড়ে পাঠানো হয় এবং হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে স্থাপন করা হয়। 

ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঝেন হুয়া ২৯-এর যাত্রা অত্যন্ত দীর্ঘ শিপিং রুট নিয়ে ফের উদ্বেগ তুলে ধরেছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক উভয় সরকারই চিনে তৈরি ক্রেনের ওপর নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এগুলির ওপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। মার্কিন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আমেরিকার বন্দরগুলিতে ব্যবহৃত জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার প্রায় ৮০ শতাংশ ক্রেনই চিনে তৈরি।

হোয়াইট হাউস এখন মার্কিন বন্দরগুলিকে চীন ছাড়া অন্য দেশ থেকে ক্রেন সংগ্রহ করতে এবং অভ্যন্তরীণভাবে ক্রেন উৎপাদনকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। তবে এই পরিবর্তন সহজ নয়। প্রায় ২০ বছর ধরে চিনা ক্রেনই ছিল সবচেয়ে সস্তা এবং সহজ বিকল্প।

সাংহাই থেকে মিসিসিপি পর্যন্ত দ্রুততম পথে সাধারণত পণ্য সরবরাহ করতে প্রায় এক মাস সময় লাগত। যা প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পানামা খাল হয়ে যেত। কিন্তু জাহাজটি যে পণ্য বহন করছিল, তার কারণে খালটি দিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। ক্রেনগুলোর লম্বা হাত (যা বুম নামে পরিচিত) জাহাজের  বাইরে বেরিয়ে থাকে। খাল কর্তৃপক্ষ এমন কোনও পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয় না যা লক ও অন্যান্য পরিকাঠামোর ক্ষতি করতে পারে। ফলে জাহাজটিকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল। ঝেন হুয়া ২৯-এর যাত্রাপথের সবচেয়ে জটিল ও বিপজ্জনক অংশটি ছিল আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কেপ অফ গুড হোপের চারপাশের এলাকা।

জাহাজের ক্যাপ্টেন টাই ম্যাকমাইকেল জানিয়েছেন, “জাহাজটিকে মোজাম্বিকের উপকূলের কাছে প্রায় দু’সপ্তাহ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলের কাছে আরও এক সপ্তাহ থামিয়ে রাখতে হয়েছিল। কারণ কেপ অঞ্চলের প্রান্তে ১২ ফুট উঁচু ঢেউ শান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “জাহাজটি ১৪ আগস্ট আফ্রিকা প্রদক্ষিণ করে এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ভেনিজুয়েলার উত্তর উপকূলের পাশ দিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর মিসিসিপির গালফপোর্টে এসে পৌঁছয়।”

টেক্সাস এবং জ্যামাইকায় ক্রেনগুলি নামানোর পর ঝেন হুয়া ২৯ জাহাজটি পানামা খালের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথ ধরে বাড়ির পথে ফিরতে সক্ষম হয়। এটি ৩ ডিসেম্বর সাংহাইয়ে পৌঁছে গিয়েছে।