আজকাল ওয়েবডেস্ক: আত্মহত্যা না খুন? প্রশ্ন উঠছে বার বার। উত্তর প্রদেশে ফের এক ভয়াবহ মৃত্যু। ঘটনাটি বারাবাঁকিতে এক যুবকের সঙ্গে ঘটেছে। খবর অনুযায়ী, এক ছাত্র চূড়ান্ত ব্ল্যাকমেল এবং হয়রানির শিকার হয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। যুবকের নাম তুষার বর্মা। রাম স্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.টেকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তুষার বর্মার মৃতদেহ কোতোয়ালি নগরের লক্ষপেদাবাগ এলাকায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়৷ যুবকের এই পরিণতিতে চমকে উঠেছে রাজ্যসহ গোটা দেশ৷
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, তুষার কে তাঁর বান্ধবীর বাবা দিনের পর দিন দিন ব্ল্যাকমেল এবং হেনস্থা করছিলেন। তদন্ত অনুযায়ী, তিনি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন তুষারের কাছে। তুষারের কাছে এই মোটা অঙ্কের টাকার দাবি পুরণ করার মত সামর্থ্য ছিলনা। এর জেরেই যুবক চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন। পরে যুবকের পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় পুলিশ কে খবর দেন।
সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। তারপর ময়নাতদন্তের জন্য স্থানীয় হাসপাতালে পাঠান হয় মৃতদেহ। পরবর্তীতে তুষারের পরিবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। জানা গিয়েছে, তুষারের বোন তাঁর দাদার মোবাইল ফোনে কিছু সন্দেহমূলক তথ্য খুঁজে পান। প্রমাণ সহ তাঁরা সমস্তটা পুলিশকে জানান৷ এরপরই ঘটনা এক বিস্ময়কর মোড় নেয়। তুষারের পরিবার মেয়েটি ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ জানায়। অভিযোগ করা হয় তুষারকে তাঁর বান্ধবীর বাবা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ব্ল্যাকমেল করছিলেন। ক্রমাগত ব্ল্যাকমেল ও তোলাবাজির অভিযোগ দায়ের করা হয়।
তুষারের মা সুষমা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের এক যুবতীর সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাঁরা প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের সঙ্গে ছবি দিতেন। মৃতের মা যুবতীর বাবা মজনু প্যাটেলের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ করেছেন। জানা গিয়েছে তিনি বারবার যুবকের পরিবারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতেন৷ এমনকি মীমাংসার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে তাঁদের পরিবারকে চরম হেনস্থা করতেন। প্রাথমিক চুক্তি সত্ত্বেও, প্যাটেল ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করতে থাকেন। ক্রমাগত পরিবারের অপমান তুষারকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল।
তুষারের কাকার মতে, আরাধ্যা অর্থাৎ তুষারের বান্ধবী একজন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী। যুবতী তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে বারাবাঁকিতে থাকতেন। আরাধ্যার ভাইয়ের সঙ্গে তুষারের যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তুষার প্রায়ই তাঁদের বাড়িতে যেতেন। আত্মহত্যার প্রায় এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ একদিন আরাধ্যার পরিবার তুষারের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ-মধ্যস্থতায় লক্ষ লক্ষ টাকায় এর মীমাংসা হয়। তবে তুষারের পরিবার জানিয়েছে, এরপরও হেনস্থা করা বন্ধ হয়নি।
আরও পড়ুনঃ স্ত্রীয়ের সঙ্গে মিলে নিজের বাবাকে খুন! ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল
আত্মহত্যার রাতে, তুষার তাঁর মা এবং বোনের সঙ্গে খাবার খেয়ে আলাদা ঘরে ঘুমাতে যান। আনুমানিক ভোর ৩ টা নাগাদ, তুষার তাঁর মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। ভিডিওটিতে তিনি তাঁর দিনের পর দিন অপমানিত হওয়ার কথা এবং মানসিক যন্ত্রণার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। ভিডিওটিতে যুবক সরাসরি আরাধ্যার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেল ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। সমস্তটা বর্ণনার পর মায়ের শাড়ি ব্যবহার করে উঠোনে ঝুলে আত্মঘাতী হন।
ঘটনার দিন, ভোরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ তুষারের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ দাহ করে। ঘটনার জেরে থানার ইনচার্জ আর কে রানা নিশ্চিত করেছেন, বর্তমানে পুলিশ বিষয়টির পূর্ণ তদন্ত করছে। অভিযোগের ভিত্তিতে যুবতীর পরিবারকে জেরা করা হয়েছে৷ ঘটনার অন্যান্য দিকও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে৷ দ্রুত এই নৃশংস ঘটনার বিরুদ্ধে প্রমাণ সহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
