আজকাল ওয়েবডেস্ক: আরও এক মহাদেশের আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রিনল্যান্ডের ঘন বরফের নীচে লুকানো একটি হারিয়ে যাওয়া মহাদেশীয় অংশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ধারণা করা হয় যে এই ক্ষুদ্রমহাদেশ লক্ষ লক্ষ বছর আগে গঠিত হয়েছিল এবং এখন যা বরফের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এটি গ্রিনল্যান্ড এবং কানাডার মধ্যে একটি জটিল টেকটোনিক ফাটল ব্যবস্থার অংশ এবং মাধ্যাকর্ষণ মানচিত্র এবং ভূকম্পিক চিত্র ব্যবহার করে শনাক্ত করা হয়েছে। এই বড় আবিষ্কার উত্তর আটলান্টিকের মানচিত্রকে নতুন আকার দিতে পারে। তাছাড়া, এই আবিষ্কারটি মহাদেশীয় বিচ্ছেদ, নতুন মহাসাগরের জন্ম এবং প্লেট টেকটোনিক পুনর্গঠনের সময় প্রাচীন ভূত্বকের টুকরোগুলি কীভাবে আটকে পড়েছিল সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা বৃদ্ধি করে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডকে পৃথককারী একটি অঞ্চলে মহাদেশীয় অংশটি আবিষ্কৃত হয়েছে। জটিল ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এই অঞ্চলটি দীর্ঘকাল ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সেই অঞ্চল যেখানে ল্যাব্রাডর সাগর এবং ব্যাফিন উপসাগর ডেভিস প্রণালীর মাধ্যমে সংযুক্ত। প্যালিওজিন যুগে টেকটোনিক কার্যকলাপ সংঘটিত হওয়ার সময় এই অঞ্চলটি গঠিত হয়েছিল। ৬১ থেকে ৩৩ মিলিয়ন বছর আগে, পৃথিবীর ভূত্বক ভেঙে যায়, যার ফলে মহাদেশীয় ফাটল এবং সমুদ্রতল ছড়িয়ে পড়ার সময়কাল শুরু হয়।
গবেষকদের মতামত-
গবেষকরা একটি আংশিকভাবে ডুবে যাওয়া মহাদেশীয় খণ্ড, ডেভিস স্ট্রেইট প্রোটো-মাইক্রোকন্টিনেন্ট, চিহ্নিত করেছেন, যা সমুদ্রতলের প্রায় ১৯-২৪ কিলোমিটার নীচে অবস্থিত। মহাদেশীয় ভূত্বকের এই অংশটি বৃহত্তর ভূমি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে এটি বর্তমানে ডুবে আছে। যা "প্রোটো-মাইক্রোকন্টিনেন্ট" শব্দটি মহাদেশীয় লিথোস্ফিয়ারের এই অসম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন অংশকে বর্ণনা করে।
কাঠামোটি শনাক্ত করার জন্য, বিজ্ঞানীরা মাধ্যাকর্ষণ মানচিত্র এবং সিসমিক ইমেজিং ব্যবহার করেছিলেন। সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, ৪৯-৫৮ মিলিয়ন বছর আগে সমুদ্রতলের বিস্তারের দিক পরিবর্তিত হয়েছিল। প্রোটো-মাইক্রোকন্টিনের অবস্থান মূলত উত্তর-পূর্ব-দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-দক্ষিণ অক্ষে এর অভিমুখ পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
পৃথিবীর বিকাশ সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি-
প্রায় ৩৩ মিলিয়ন বছর আগে, গ্রিনল্যান্ডের টেকটোনিক কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায় যখন এটি উত্তর আমেরিকার প্লেটের সঙ্গে যুক্ত হয়। ওই প্লটের এলেসমেয়ার দ্বীপের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনাটি গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে সমুদ্রের নীচে প্রোটো-মাইক্রোমন্টিনের অবস্থানকে দৃঢ় করে তোলে। এই আবিষ্কার প্লেট টেকটোনিক্স সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করে, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের গঠন, বিবর্তন বর্ণনা করে এবং মহাদেশীয় বিচ্ছেদ, সমুদ্র গঠন সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা প্রদান করে।
