দেখা হয়নি কখনও, তবুও ভালবাসার টানে জড়িয়ে পড়ে পাবলো, অদিতি। অন্যরকম গল্প নিয়ে অদর্শনের প্রেমের এক সুন্দর ছবি উপহার দিলেন প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী 

সেক্টর ফাইভের কর্পোরেট চাকুরে পাবলো (‌আবীর চট্টোপাধ্যায়)‌ আর অদিতি (‌মিমি চক্রবর্তী)। অদিতি বেহালা থেকে অফিসে আসতে প্রায়ই দেরি করে ফেলে। অন্যদিকে পাবলোর সবসময়েই নাইট শিফট। এরা কেউ কাউকে চেনে না। কিন্তু ব্রোকার সুখলালের নিপুণ কৌশলে একই ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তারা দুজনে। পাবলো একটা ঘরে দিনের বেলা থাকে। অদিতি অন্য একটা ঘরে থাকে রাতে। ড্রয়িংরুম কমন। ফ্রিজও কমন। 

এই ‘‌কমন স্পেস’‌‌ তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক বুনে দেয়। প্রথমে পাবলো জানতো, তার ফ্ল্যাট–‌মেট একজন পুরুষ। পরে জানল, সে একজন মেয়ে। এবং এক বিশেষ পারফিউমের গন্ধ যেন একটা চরিত্র হয়ে ধরা দেয় পাবলোর কাছে। 

ফ্রিজের গায়ে তারা চিরকুট লিখে রাখে পরস্পরের জন্যে। না–‌দেখা ফ্ল্যাট–মেটের জন্যে পরস্পরের একটা টানও তৈরি হয়। কিন্তু কেউ কাউকে দেখেনি একদিনও। এরই মাঝখানে, দুম করে চাকরি ছেড়ে দিল্লি চলে যায় অদিতি। আলাপ হল না দুজনের। 

পরে কি আলাপ হবে? হলেও, কোন দিকে গড়িয়ে যাবে না–‌দেখা, না–‌শোনা বন্ধুত্বের সম্পর্ক? 

এমনই এক অদেখা, অচেনা সম্পর্ককে নিয়েই ‘‌আলাপ’‌। টালিগঞ্জের দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফার প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী পরিচালনায় এসে প্রথমেই বেছে নিয়েছিলেন কমেডির ধারা। সেই পথ ছেড়ে, এবার এক অন্যরকম সম্পর্কের গল্প পর্দায় নিয়ে এলেন প্রেমেন্দুবিকাশ। এ এমন এক সম্পর্কের গল্প, যেখানে নায়ক–নায়িকার দেখা হয় না। এমন এক গল্পের টান পর্দায় ধরে রাখা অবশ্যই কঠিন ছিল। সেই কঠিন কাজটা সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন পরিচালক। এবং শেষ পর্যন্ত গল্পের টান বজায় রেখেছেন দক্ষতার সঙ্গে। 

এখানে অন্তর্মুখী পাবলোর চরিত্রে অন্যরকম আবিরকে পাওয়া গেল। দক্ষ অভিনয় তাঁর। স্মার্ট অদিতির চরিত্রে মিমি চক্রবর্তী যে স্মার্ট অভিনয় করছেন, সন্দেহ নেই। ফ্ল্যাট–‌প্রতিবেশিনীর চরিত্রে ভদ্রা বসুকে খুব ভাল লাগল। অন্যান্য চরিত্রে স্বস্তিকা দত্ত, তন্বী লাহা, দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়ও প্রশংসাযোগ্য। 

ক্যামেরায় অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় প্রশংসনীয়। পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং প্রেমেন্দুবিকাশ চাকীর চিত্রনাট্য এ ছবির সম্পদ। এবং কমেডি–‌ধারা থেকে সরে এসে এক আশ্চর্য প্রেমের সিরিয়াস ছবি উপহার দিতে পেরেছেন প্রেমেন্দুবিকাশ। সিরিয়াস প্রেমের ছবি, কিন্তু চিত্রনাট্য অকারণ জটিল নয়। তবে, দৈর্ঘ্য একটু কম হলে গতি আরও বাড়ত। নতুন ভাবনার ছবি তৈরি করে নতুন ভরসা দিলেন প্রেমেন্দুবিকাশ। ‌