আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইতিহাসের পাতায় নাম লিখে ফেলেছেন শচীন অশোক শর্মা। ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারের সেক্রেটারি তিনি। সেই শচীন শর্মাই আয়রনম্যান ট্রায়ালথন সম্পূর্ণ করে এসেছেন। ভারতীয় রেলের প্রথম অফিসার হিসেবে নজির গড়েছেন তিনি। হয়ে গিয়েছেন প্রকৃত অর্থেই একজন লৌহমানব

অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট ম্যাককুয়ারিতে আয়রনম্যান ট্রায়াথলন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৩.৮ কিমি সাঁতার, ১৮০ কিমি সাইক্লিং ও ৪২.২ কিমি ম্যারাথন--এই তিনটি ইভেন্ট শেষ করতে হত ১৭ ঘণ্টায়শচীন শর্মা সেই প্রতিযোগিতা শেষ করেন ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট ও ৫২ সেকেন্ডে। একাধারে তিনি সরকারি অফিসার, অন্যদিকে দুর্দান্ত একজন অ্যাথলিট। সেই সঙ্গে আবার মিউজিশিয়ানও বটে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি। একমাত্র সরকারি অফিসার হিসেবে তিনি ১২২ কিমির সিল্ক রুট আলট্রা ম্যারাথন (লাদাখে) সম্পূর্ণ করেছেন ২০২৪ সালে।

আরও পড়ুন: 'পাকিস্তানকে এক শতাংশ সুযোগও আমি দিতে চাই না', এশিয়া কাপ ফাইনালের আগে বড় মন্তব্য প্রাক্তন তারকার ...

তাঁর মুকুটে যোগ হয়েছে অজস্র পালক। তিনি লাদাখ ম্যারাথন (৪২ কিমি), টাটা মুম্বই ম্যারাথন (৪২কিমি) টাটা আলট্রা ম্যারাথন (৫০ কিমি), লাদাখে খারদুংলা চ্যালেঞ্জ (৭২ কিমি)অতিক্রম করেছেন। আবার জিও সাইক্লোথন (১০০ কিমি), জুহু সি সুইম্যাথন (৩কিমি), সাঙ্ক রক টু গেটওয়ে সি সুইম্য়াথনে (৫ কিমি) পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। বার্গম্যান অলিম্পিক ট্রায়াথলন, গোয়া আয়রনম্যান ৭০.৩ ট্রায়ালথনেও নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।  

Western Railway Officer Sachin Sharma

এই ধরনের ইভেন্টে শারীরিক দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। ব্যবহারিক জীবনেও সাহসী-আগ্রাসী হওয়ার দরকার রয়েছে। সুভদ্র শচীন শর্মা বলছেন, ''আমি ছোটবেলা থেকেই সাহসীআগ্রাসী বটে। অতিরিক্ত সাহসী হওয়ার জন্য আমাকে বেশ কয়েকবার বিড়ম্বনায় ড়তে হয়েছিল। একবার কলেজে পড়ার সময়ে জঙ্গলের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম। ট্রেকিং করতে করতে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম জঙ্গলে। আকর্ষণীয় অনেক ঘটনা রয়েছে আমার জীবনে।''

কখনও মরুভূমিতে দৌড়তে দৌড়তে দেখেছেন তাঁর পাশে দৌড়চ্ছে বিশালাকার এক কুকুর। আবার সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময়ে জেলি ফিশের কামড় খাওয়ারও অভিজ্ঞতা রয়েছে। বহু যুদ্ধের সৈনিক শচীন শর্মা বলছেন, ''ম্যারথন দৌড়তে হয়। এখানে অপেক্ষাকৃতভাবে দুর্ঘটনা কমই হয়ে থাকে। তবে পা মুচকে যেতে পারে। আবার শারীরিক দিক থেকে সক্ষম না হলে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই কারণে শরীরের যত্ন নিতে হয়। শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয়। ঘুমের দরকার আছে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়''

শারীরিক দিক থেকে সক্ষম না হলে এই ধরনের ইভেন্টে অংশ নেওয়া কিন্তু রীতিমতো কঠিন ব্যাপার। সমুদ্রে সাঁতার কাটাও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। সাঁতার দিতে দিতে প্রতিযোগীর ক্র্যাম্প হতে পারে। শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। সামুদ্রিক প্রাণী আক্রমণও শানাতে পারে। আবার সাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে শচীন শর্মা বলছেন, ''পুরোদস্তুর মেকানিক না হলে কিন্তু চাপ রয়েছে। অ্যাসেম্বল করা শিখতে হয়। আমরা বলি সাইকেলের সঙ্গে বিয়ে করে ফেলতে হবে'' এই সবই শচীন শর্মার হাতের মুঠোয়। 

তিনি যে লৌহমানব হবেন, এমন স্বপ্ন কোনওদিই দেখেননিঅ্যাথলিট ছিলেন। খেলাধুলো ভালবাসতেন। কিন্তু ট্রায়াথলিট হবেন এমন কল্পনা তিনি কোনওদিন করেননি। কিন্তু ভাগ্যকে খণ্ডাবে কে! এটাই বোধহয় তাঁর দস্তুর ছিল।

সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার জন্য একসময়ে কৃচ্ছসাধন করেছেন। কার্যত 'সাধু' মতো জীবনযাপন করতেন। ভোর সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি নিতেন। বিদ্যার আরাধনা করতেন। নিজের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তনও আনেন। এখনও সেই পরম্পরা চলছে। শচীন শর্মা দারুণ ব্যস্ত এবং একই সঙ্গে অত্যন্ত দায়িত্বশীল এক কাজে জড়িয়ে রয়েছেন। ব্যবহারিক লৌহমানব বলছেন, ''ইচ্ছা থাকলেই সব করা যায়সময় বের করে নিতে হয়। আমি ভোর সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত অনুশীলন করি। কারণ আমি দেখেছি ওই সময়টায় আমার কাছে অফিসের ফোন কল আসে না। অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজও ওই সময়টায় থাকে না। এর জন্য জীবনেও অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নিই, ঘুমিয়েও পড়ি তাড়াতাড়ি আর সকালে উঠি আরও তাড়াতাড়ি'' পরিশ্রম, সাধনা, অধ্যবসায় তাঁকে এনে দিয়েছে সাফল্য। শচীন শর্মা প্রেরণা হতে পারেন সবার।

আরও পড়ুন: 'যতদিন যুদ্ধ থাকবে, ততদিন...', ভারত-পাক ফাইনালের আগে বিতর্কিত মন্তব্য রশিদ লতিফের