আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমশীতল রবিবারের সকালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫কে। ম্যারাথনের দশম সংস্করণে তিলোত্তমার বুকে তৈরি হল একাধিক রেকর্ড।
একের পর রেকর্ড ভাঙল, চ্যাম্পিয়নরা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেন। পুরুষদের আন্তর্জাতিক এলিট বিভাগে উগান্ডার জোশুয়া চেপটেগেই নিজের সুনাম বজায় রাখলেও, দিনের আসল নায়ক হয়ে উঠলেন ভারতের গুলভীর সিং ও সীমা।
দু’জনেই নিজেদের এলিট বিভাগে নতুন কোর্স রেকর্ড গড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন এদিন। দু’বারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন জোশুয়া শুরু থেকেই রেসের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন।
ফ্ল্যাগ-অফের পর থেকেই গতি নির্ধারণ করে তিনি শেষ পর্যন্ত আর পিছনে তাকাননি। ১:১১:৪৯ সময় নিয়ে তিনি কলকাতায় নিজের প্রথম ২৫ কিলোমিটারের খেতাব জয় করেন।

তানজানিয়ার আলফন্সে ফেলিক্স সিউম্বু (১:১১:৫৬) এবং লেসোথোর তেবেলো রামাকোঙ্গোয়ানা (১:১১:৫৯) দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
১৫ এবং ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রথম তিনজন প্রায় সমান তালে দৌড়ালেও শেষ চার কিলোমিটারে গতি বাড়িয়ে জয় নিশ্চিত করেন জোশুয়া।
জয়ের পর তিনি বলেন, ‘রেকর্ডের চেয়ে জয়টাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কলকাতায় ফিরে এসে জেতাটা আমার জন্য বিশেষ। বেঙ্গালুরুতে জিতেছি। এখানেও বিশ্বমানের অ্যাথলিটরা ছিল। এই জয় আমাকে আগামী ম্যারাথনের প্রস্তুতিতে আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’
মহিলাদের আন্তর্জাতিক এলিট বিভাগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন সুতুমে আসেফা কেবেদেকে হারিয়ে দেন ইথিওপিয়ার ডেগিটু আজিমেরাও।
শুরু থেকেই এগিয়ে থেকে ১:১৯:৩৬ সময়ে দৌড় শেষ করেন। এই নিয়ে কলকাতায় তৃতীয়বার ম্যারাথনে অংশ নিলেন তিনি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন সুতুমে দ্বিতীয় হন ১:২০:২৮ সময়ে এবং মেসেলেচ আলেমায়েহু ১:২০:৪৮ সময় নিয়ে তৃতীয় স্থানে শেষ করেন।
তবে এদিন ডেগিটু জিতলেও কোর্স রেকর্ড থেকে গেল সুতুমের দখলেই। রেস শেষে ডেগিটু বলেন, ‘শুরুতে পা একটু শক্ত লাগছিল, তাই শুধু শক্তভাবে দৌড়ানোর দিকেই মন দিয়েছিলাম। ১০ কিলোমিটারের পর পা ঠিক লাগতে শুরু করে, তখন গতি বাড়াই এবং শেষ পর্যন্ত জয় পাই।’
অন্যদিকে, ভারতীয় এলিট বিভাগে রেকর্ডের বন্যা বয়ে যায় এদিন। গুলভীর সিং অসাধারণ দৌড়ে নিজেরই করা ভারতীয় কোর্স রেকর্ড দু’মিনিটেরও বেশি সময়ে ভেঙে দেন।
এমনকী, আন্তর্জাতিক এলিটদের সঙ্গেও কিছুটা সময় তাল মিলিয়ে চলেন। শেষ পর্যন্ত ১:১২:০৬ সময় নিয়ে ফিনিশ করে তিনি ২০২৪ সালে নিজের ১:১৪:১০ ফিনিশের রেকর্ড ভেঙে দেন।

হরমনজ্যোত সিং (১:১৫:১১) ও সাওয়ান বারওয়াল (১:১৫:২৫) দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে শেষ করেন। জয়ের পর গুলভীর বলেন, ‘রেকর্ড হঠাৎ তৈরি হয় না। নিয়মিত পরিশ্রম আর ধারাবাহিকতার ফলেই সেটা আসে। ভারত ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, রেসের পর রেসে।’
মহিলাদের ভারতীয় এলিট বিভাগেও দাপট দেখালেন সীমা। ১:২৬:০৪ সময়ে দৌড় শেষ করে ২০১৭ সালে সুরিয়া এল-এর করা ১:২৬:৫৩ কোর্স রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি।
সঞ্জীবনী যাদব ১:৩০:৩৪ সময়ে দ্বিতীয় এবং নির্মাবেন ঠাকুর ১:৩২:০২ মিনিটে ফিনিশ করে তৃতীয় হন। শুরু থেকেই সীমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে ছিলেন।

২১.১ কিলোমিটারে ব্যবধান দাঁড়ায় তিন মিনিটে। শেষ পর্যন্ত অনায়াসে ফিনিশ করে আট বছরের পুরনো রেকর্ড মুছে দেন তিনি।
জয়ের পর সীমা বলেন, ‘জেতার মানসিকতা নিয়েই আমি এখানে এসেছিলাম। কোর্স রেকর্ড করতে পেরে খুব খুশি। এখন আমার লক্ষ্য আগামী বছর এশিয়ান ও কমনওয়েলথ গেমসের যোগ্যতা অর্জন করা।’
